মহাশ্মশানে চুরি দেখে ফেলায় তরুণ খুন, মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাস (৫৮) হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পুলিশ হত্যাকাণ্ড ও চুরির ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গ্রেফতার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মহাশ্মশানে হাজির করে প্রেস ব্রিফিং করেন নাটোরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন।
গ্রেফতার সবুজ হোসেন (২৪) নাটোর সদরের বড় হরিশপুর এলাকার রমজান আলীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, গত ২১ ডিসেম্বর সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের বারান্দা থেকে তরুণ দাস (৫৮) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভবঘুরে ব্যক্তির হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তরুণ দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে। তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং প্রায়ই রাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। ঘটনার রাতে ভান্ডার কক্ষ থেকে কাঁসা ও পিতলের মালামাল এবং অর্থ চুরি যায়। এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে তপু কুমার দাস নাটোর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাসকে নাটোর শহরের সব মানুষই চিনতো। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে মাঝেই কুকুরের সঙ্গে খেলা করা, কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরে কয়েকটি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত ও পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে তাকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্মসম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় তখন বলেছেন, বিবৃতিতে তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এমন কোনো পদে ছিলেন না। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত সবুজ মাদকসেবী। তিনি তার ৫ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার রাতে মহাশ্মশানের পাশে লেবু বাগান থেকে লেবু চুরি করতে আসেন। ওইদিন বিকালে মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সংগৃহীত টাকা মহাশ্মশানের ভান্ডারে থাকতে পারে ধারণা করে তারা ভান্ডার কক্ষে হানা দেয়। এ সময়ে সেখানে হত্যার শিকার তরুণ কুমার এসে ঘটনা দেখে ফেলেছেন সন্দেহে অভিযুক্তরা তরুণের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুজে দেয়। রাতের কোনো এক সময়ে তরুণ শ্বাসরোধ হয়ে সেখানে মারা যান।
এ ঘটনার পর দেশে বিদেশে মন্দিরে পুরোহিত, সেবায়েত কোথাও আবার মন্দিরের নিরাপত্তা কর্মী খুন হয়েছে বলে প্রচারণায় তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় সবুজ বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা শুরু করে। বৃহস্পতিবার চট্রগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার সময় সবুজের সঙ্গে থাকা অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরিফুল ইসলাম, নাটোর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী এবং নাটোর থানার ওসি মাহবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।