শীতে কাঁপছে চরফ্যাশন
আগুন আর ছেঁড়া কাঁথা একমাত্র অবলম্বন ৩০০ জেলে পরিবারের
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
ছবি: যুগান্তর
চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে বসবাস করা ৩০০ জেলে পরিবার শীতে কাঁপছে। এসব পরিবারের লোকজন ভোটার হলেও সরকারি কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। আগুন আর ছেঁড়া কাঁথাই এসব জেলে পরিবারের শীত নিবারণের একমাত্র অবলম্বন।
সরেজমিনে জানা গেছে, সব
সময় নৌকার কাছে আগুন পান না তারা। ফলে এসব জেলে পরিবারের বৃদ্ধ-শিশুদের শীতজনিত রোগ
লেগেই আছে।
ওয়ার্ল্ডফিশের ইকো ফিশ প্রকল্পের ভোলা জেলা সমন্বয়কারী খোকন চন্দ্র
শীল বলেন, ‘আমরা এসব জেলেদের
ওয়াটার জিপসি বলে থাকি। তাদের সরকারের নিয়ম ও আইনকানুন মানানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু
কিছু পরিবারকে সোলার প্যানেল ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। এসব জেলে মৌলিক ও মানবাধিকার
থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
চরকুকরিমুকরির ইউনিয়ন পরিষদ সচিব লোকমান হোসেন বলেন, ‘এসব জেলে উদ্বাস্তু। তাদের বসতি
নেই। যার কারণে পরিষদের করা তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না। আমি বিষয়টি জানি, চেষ্টা
করছি এদের জন্য কিছু করার।’
চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের বেতুয়াসুলিজ খালের মাথায় দেখা
যায়, এখানে মেঘনাতীরে প্রায় ৫০ নৌকায় বসত করে জেলে পরিবার। এসব নৌকায় বসত করে প্রায়
২০০ মানুষ। এসব ওয়াটার জিপসি লোকজনকে বলে মানতা-সম্প্রদায়। এসব নৌকার প্রধান নারী।
তিনি জাল পাতেন, তাকে সাহায্য করেন সন্তান, কন্যা ও স্বামী। এমনই এক নারী কমেলাবানু
(৩৪)।
তিনি বলেন, ‘নদীতে
হাড়কাঁপানো শীত বইছে সারা দিন। সারা দিন কাজকর্মের মধ্যে থাকেন। গত বছর এই সময়ে নদীতে
শীত থাকলেও কাবু করতে পারেনি। এবার বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। তীব্র শীতে শরীর কুঁকড়ে
আসছে হাত-পা। বেয়ান বেলাত উইটতে পোলাইনের ঠেলা-গুঁতা লাগে, শরীল জইম্যা যায়। উইড্ডাই
আগুন জ্বালাই। গাও আতপাও গরম কইরা নৌকা লইয়্যা বাইরাই।’
হাছিনা (৪০) বলেন, ‘মাঘের শুরুত ঠান্ডা বাতাস দেহা দিছে। শীতে পেত্তেক (প্রতি) রাইতেই মনে অয় মইররা জামু, পোলাইন-ছালাইন লইয়্যা ছিরা খাতা গায় দিয়া রাইত কাডাই।’ কইম আলি (৫০) বলেন, ‘কষ্টের জীবন। সরকার উরফের মাইনষেরে সব দ্যায়, আমগোরে কিছু দ্যায় না।’
অন্তত ৫৬ জন জল-উদ্বাস্তুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা একেকজন
একেক ঘাটে ভোটার হয়েছেন। তবে ভোটের সময় যেখানে ভোটার হয়েছেন, সেখানেই থাকার চেষ্টা
করেন। তারা সরকারের সব আইনকানুন মেনে চলেন। কিন্তু সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি,
বেসরকারি সংস্থা তাদের কখনোই সাহায্য-সহযোগিতা করেন না। সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা শীতবস্ত্র
বিতরণ করছেন। কিন্তু তারা পাচ্ছেন না।
তারা চরফ্যাশনের মেঘনা নদীর বেতুয়া, কচছপিয়া, ঢালচর, পাতিলারঠোটা,
কুকরির মনুরা ও তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসবাস করছেন। এসব জেলের প্রধান শুক্কুর
সরদার বলেন, তারা জাটকা সংরক্ষণ অভিযান ও মা-ইলিশ রক্ষা অভিযান মেনে চলেন। কিন্তু সরকার
ও জনপ্রতিনিধিরা কখনোই তাদের চাল দেন না। দেন না কোনো শীতবস্ত্র। কোনো সরকারি সহায়তা
না পেলেও তারা ভোট দেন। ৩শত নৌকায় ৩০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষ বসত করে। এসব জেলে
পরিবারের লোকজন সরকারের আইন মানতে গিয়ে বছরের অনেক সময় বেকার থাকছেন। জালের পরিবর্তে
মাছ শিকারে অন্য যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
কীভাবে সংসার চালান জানতে চাইলে সরদার বলেন, আড়তদারের কাছে ঋণ নিয়ে চলেন। কুকরি বাজারের পল্লিচিকিৎসক শ্রী ভুষন বাবু বলেন, এসব জেলে পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রকম শীতজনিত রোগে ভুগছেন।
ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মোস্তফা বলেন, সরকার থেকে
এসব জেলের জন্য কোনো বরাদ্দ আসে না। তাই দেওয়া হয় না।