কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও ৭ বছর ধরে বেতন তুলছেন অফিস সহায়ক

শাহরিয়ার কামাল, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের (৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী) অফিস সহায়ক আয়েশা আক্তার গত ৭ বছর ধরে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার স্থলে পারভীন আক্তার নামের এক নারীকে নামমাত্র মজুরি দিয়ে সরকারি এ অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি। আর এ অনিয়মটি করতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা নিজেই।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজমল হোসাইনের সহায়তায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত না থেকেও ৭ বছর ধরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করা নিয়ে অফিসপাড়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আয়েশা আক্তার ১৯৯৫ সালের ২২ অক্টোবর শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেন। ২০১২ সালে একই পদে তিনি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বদলি হয়ে আসেন।
এর পর ২০১৭ সালের দিকে শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে উপজেলার চরফলকন এলাকার পারভীন আক্তার নামের এক নারীকে নামে মাত্র মজুরি দিয়ে তার পদে অলিখিত নিয়োগ প্রদান করেন আয়েশা। ডিউটি না করেই মাস শেষে অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করে নিয়ে যান তিনি। তার বেসিক বেতন ২৬ হাজার টাকা ও আনুতোষিক সব মিলিয়ে মাসিক প্রায় ৪০ হাজার টাকা হারে গত সাত বছরে অন্তত ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন আয়েশা আক্তার। আর এ কাজটি জেলা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই করা হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।
যুব উন্নয়ন অফিস সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নাম গোপন রাখার অনুরোধে বলেন, বছরের পর বছর ৪র্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী এভাবে ডিউটি না করে বেতন উত্তোলন করার পেছনে অবশ্যই কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। না হয় কোন ভাবেই এমন অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আয়েশার উপর যে মানবিকতার কথা বলা হচ্ছে এতে অর্থনৈতিক সুবিধার বিষয় থাকতে পারে জানিয়ে বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে বদলি (চুক্তিতে) ডিউটি করা পারভিন আক্তার বলেন, আমাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে এ পদে দায়িত্ব দিয়েছেন আয়েশা আক্তার। তিনি মাসে দু-একদিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন তুলে নিয়ে যান।
নিজের র্কমস্থলে অনুপস্থিতি বিষয়ে আয়েশা আক্তার বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে উর্ধ্ব কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে অবহিত করেই পারভীনকে আমার নিজ অর্থায়নে আমার ওই পদে দায়িত্ব দিয়েছি।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আজমল হোসাইন বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগেই আয়েশা আক্তারের পরিবর্তে পারভীন এ পদে দায়িত্ব পালন করতেছে। ২০১৭ সালে তৎকালীন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম পাঠান লক্ষ্মীপুর জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এ অনিয়মটি করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবহিত করা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তবে সফিকুল ইসলাম পাঠান অন্যত্র বদলি হওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন তিনি কর্মকর্তা আজমল হোসাইন।
লক্ষ্মীপুর জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরচিালক জসিম উদ্দীন আহমদ খাঁন বলেন, আমাকে কেউ আগে ঘটনাটি জানায়নি। আমি পরিদর্শনে গেলে তাকে দেখতে পাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে আয়েশা বলেছেন, তার অফিস না করার বিষয়ে আপনি জানেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আয়েশার কথা সত্যি নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, প্রত্যেক অফিসের জনবল সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ওই দপ্তরের নিজস্ব ব্যাপার। বিষয়টি আমি এ প্রথম জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।