Logo
Logo
×

সারাদেশ

নলছিটিতে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি

Icon

মো. এনায়েত করিম, নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

নলছিটিতে বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি

ঝালকাঠির নলছিটিতে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি, হুমকি, ধামকি ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

নলছিটি পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় নিরীহ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা তার হামলা মামলার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

অভিযুক্ত এই বিএনপি নেতা হলেন উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মায়েল আহম্মেদ। তিনি হয়বাতপুর গ্রামের মো. আলতাফ হোসেনের ছেলে। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই (গত বছরের ৫ আগস্টের পর) মায়েল তার সহযোগীদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থকদের গালাগাল, হুমকি-ধামকি দিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেন। 

এ সময় ব্যবসায়ীসহ অনেকেই তার দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে বাধ্য হন। এর কিছুদিন পরেই মায়েল চাঁদাবাজির নতুন কৌশল হিসেবে মামলা সাজানো শুরু করেন। এতে শহরের বড় বড় ব্যবসায়ী ও টাকাওয়ালাদের টার্গেট করেন তিনি। এ দফায় তিনি নিজে বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী (অনেক নিরীহ ব্যক্তিসহ), রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন সাধারণ ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলার এজাহার লেখান। যা তিনি নিজেই বা তার লোকজন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। 

যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের ওই লিখিত এজাহারের কপি দেখিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। ভয় অনেকেই তাকে টাকা দিয়ে তাদের নাম কাটান। যুগান্তরের কাছে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি ওই বিএনপি নেতা (মায়েল) ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মামলার কপি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মায়েলের কথিত মতে আদালতে তার দায়েরকৃত মামলায় ৬৭ জনকে নামীয় এবং আরও ৬০-৭০ জনকে বেনামী আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ,আসামিরা ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩-৪টার দিকে আগ্নেয়অস্ত্রসহ কুলকাঠি ইউনিয়ন বিএনপি অফিসের সম্মুখে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাদী মায়েলসহ অন্যান্যদের আহত করেন। পরে তারা ইউনিয়ন বিএনপির অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করেন। এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে নলছিটি পৌর শহরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা, সাবেক কয়েকজন জনপ্রতিনিধি (ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলর), ঘটনার সময়ে প্রবাসে থাকা সেনা সদস্যও রয়েছেন।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- নলছিটি শহরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী দীপক কুন্ডু তার ভাই ব্যবসায়ী উত্তম কুন্ডু, শহরের হাই স্কুল সড়কের হানিফ হাওলাদার, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইসমাইল হোসেন, শ্যামল চন্দ্র মন্ডল এবং গার্লস স্কুল সড়কের (ভেন্ডার পট্টির) দুইজন বেকারি ব্যবসায়ী। এতে ওই ব্যবসায়ীরাসহ অন্যান্যরা (যাদের আসামি করা হয়েছে)আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, মায়েলকে টাকা দিয়েছি। তাই তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলায় আসামি হিসেবে নাম রয়েছে এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, টেলিফোন করে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন ওই বিএনপি নেতা। দাবিকৃত টাকা দিলে মামলার তদন্তের সময় পুলিশকে বলে নাম বাদ দিয়ে দেবেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বর্তমানে ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, আমি ২০০৮ সাল থেকে কুয়েতে ছিলাম। গত বছরের (২০২৪ সাল) ১৬ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যাই। পরে কুয়েত থেকে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করি। মামলায় বর্ণিত ঘটনার তারিখ আমি সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কুয়েতে চাকরিরত ছিলাম। এ সময় আমি দেশেই ছিলাম না। এছাড়া আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে কখনই জড়িত ছিলাম না। এখনও নেই। 

শহরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী দীপক কুণ্ড জানান, আমার বাবা এই শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে আমরা জড়িত নই। যে ঘটনায় আমাদের আসামি করা হয়েছে, তা সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই।  

ব্যবসায়ী হানিফ হাওলাদার ও শ্যামল চন্দ্র জানান, আমরা কোনো রাজনীতি করি না। কোনো দলের সদস্য না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে সংসার চালাই। মামলায় আমাদেরকে আসামি করা হয়েছে জানতে পেরে আমরা আতঙ্কিত। এদিকে বিএনপি দলীয় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী ও সমর্থক জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে মায়েল চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্য শুরু করেছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাকে থামানো দরকার। তবে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। 

 এ ব্যাপারে কুলকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. জুলফিকার বিশ্বাস বলেন, রাজনৈতিক মামলা হলেতো দলীয় সিদ্ধান্তে হওয়া উচিত ছিল। আমিতো কিছুই জানি না। আমার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এটা তার ব্যক্তিগত স্বার্থের মামলা। শহরের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নিরীহ, নিরপরাধ ব্যবসায়ীকেও আসামি করা হয়েছে শুনেছি; যেটা দুঃখজনক। 

নলছিটি উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান হেলাল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে এ ধরনের কোন মামলা দেওয়া হয়নি। আমিও মুখে মুখে শুনেছি। নিরপরাধ যে কাউকে আসামি করা হলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।  কারো কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. মায়েল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে মামলা করেছি। এটি একটি রাজনৈতিক মামলা । আদালত ১ জানুয়ারি শুনানি শেষে তদন্তসাপেক্ষে নলছিটি থানার ওসিকে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। 

নলছিটি থানার ওসি মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমিও ঘটনাটি এক সপ্তাহ যাবৎ শুনছি। বিভিন্ন মানুষকে টেলিফোন করে তিনি (মায়েল) মামলা দায়েরের কথা বলছেন। আদৌ মামলা হয়েছে কিনা তা জানি না। এখনো কোনো কাগজ হাতে পাইনি। এটা মানুষকে হয়রানি করা ছাড়া কিছু না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম