সেই শিক্ষিকার অনিয়মের সত্যতা মিলেছে
গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি মহল মরিয়া হয়ে মাঠে নামার অভিযোগ উঠেছে। এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় ‘প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ, ভর্তির ব্যানারে শেখ হাসিনার শ্লোগান, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের টনক নড়ে।
পরদিন রোববার দুপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার ঘটনা তদন্তের জন্য ওই স্কুল পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক গৌরনদী শিক্ষক সমাজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় ১৫-২০ ব্যক্তি বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন।
এ সময় সবার উপস্থিতিতে ওই ২ শিক্ষা কর্মকর্তা অভিযুক্ত শিক্ষিকা, সহকারী শিক্ষিকাদের ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার ২ জানুয়ারি সকালে স্কুলের স্টিলের আলমারি থেকে ব্যানারটি বের করে স্কুলের প্রধান ফটকে টাঙ্গানোর সত্যতা পায় তারা।
এ সময় ওই ২ শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার নিজের দোষ ও দায় স্বীকার করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই ২ কর্মকর্তা সাদা কাগজে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে স্কুল ত্যাগ করেন। এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে মহান বিজয় দিবস ও শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন না করার ও অভিবাবকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগের বিষয়টিও এড়িয়ে যান শিক্ষা কর্মকর্তারা।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রুবেল গোমস্তা জানান, ছাত্র-জনতার হত্যাকারি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে রয়েছে। হাসিনার দোসর শিক্ষিকা তানিয়া আক্তারের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। কর্তৃপক্ষে সেচ্ছাচারিতা, উদাসীনতা ও পক্ষপাতিত্ব করলে ছাত্র-জনতা কঠোর আন্দোলনে মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া আক্তার বলেন, আমার দোষ ও দায় স্বীকার করে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রোববার স্কুলে এসেছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়েছে তারা। আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপিয়েছি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল হালদার বলেন, সরেজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকাও নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তদন্তে গিয়েছি এ মর্মে উপস্থিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর এনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হবে।
বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা আপোষ মিমাংসার বিষয় না। ঘটনা তদন্ত করে গৌরনদী শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।