বালু উত্তোলনে যুবলীগ নেতাকে বিএনপির সহযোগিতার অভিযোগ
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১২ পিএম
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বগুড়ার ধুনটে আবারও যমুনা নদী থেকে বালু তুলছেন যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরাও সুবিধার বিনিময়ে তাকে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বালু তোলা বন্ধে সাইফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে আদালত বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমলে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন জানান, তিনি তার লিজ নেওয়া পয়েন্ট ও সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থানের বাইরে কোথাও বালু তোলেন না। নদীতে পানি না থাকায় গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ছয়টি পয়েন্টের মধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাঁচটি ও একটি তার। বিএনপির লোকজন ৫ আগস্টের পর মিথ্যা রাজনৈতিক মামলার মতো তার বালু ব্যবসার ক্ষতি করতে মিথ্যাচার করছেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে।
অভিযোগে জানা গেছে, ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন গত ২০২৩ সালের জুনে ৫৭ লাখ টাকায় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর চৌবেড় মৌজার ৩৯ একর জমিতে বালু মহাল ইজারা নেন; কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলার বোহাইল, আওলাকান্দী এবং ধুনট উপজেলার শহড়াবাড়ি, শিমুলবাড়ি, ভান্ডারবাড়ি, বৈশাখী, কৈয়াগাড়ি ও ভুতবাড়ি গ্রামে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ এলাকা থেকে বালু তোলা শুরু করেন।
গত ৫ আগস্টের পর গোসাইবাড়ি এবং ভান্ডারবাড়ি এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরাও সুবিধার বিনিময়ে তাকে সহযোগিতা করছেন। নদী থেকে তোলা বালু শহড়াবাড়ি ঘাটের একাধিক স্থানে মজুতের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া এবং টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, জামালপুরের তারাকান্দি ও সরিষাবাড়ীতেও নৌকাযোগে বিক্রি করছেন।
এদিকে যমুনার বাঁধ ও তীরবর্তী এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু তোলায় ফসলি জমিসহ বাড়িঘর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বালু তোলার ফলে শহড়াবাড়ি খেয়াঘাটের পাশের চর ও শিমুলবাড়িতে জেগে উঠা চরও যমুনায় বিলীন হয়েছে।
শহড়াবাড়ি ঘাট থেকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহড়াবাড়ি থেকে ধুনট উপজেলা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ ও মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি যমুনার তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
শিমুলবাড়ি গ্রামের আজিজার রহমান জানান, দিন ও রাতে ২০ থেকে ৩০টি বড় ড্রেজারচালিত নৌকা দিয়ে পাইপের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। সেই বালু পাশের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়াসহ টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী, তারাকান্দিতে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। যততত্র বালু তোলার ফলে যমুনার পশ্চিমপাড়ের শিমুলবাড়ি, বানিয়াজান, শহড়াবাড়িসহ কয়েকটি গ্রাম এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
আদালতে রিটকারী সাইফুল ইসলাম জানান, গত ডিসেম্বরে বালু তোলা বন্ধের জন্য আদালতে রিট করা হয়। স্থগিতাদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, ধুনট নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ধুনট থানায় দেওয়া হলেও বালু তোলা এখনো বন্ধ হয়নি।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টফার হিমেল রিছিল বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ অবৈধভাবে বালু তুললে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।