চার লেনের সড়ক তৈরির দাবি
গর্ত-খানাখন্দে বেহাল রায়পুর-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক
তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০২ পিএম
ছবি: যুগান্তর
গত ৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের। রায়পুরের বোয়াডার বাজার থেকে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার পর্যন্ত অংশের প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। এতে করে ওভারলোড বালুর গাড়ির কারণে সড়কটি বেশি নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে
দেখা যায়, ২০১৮ সালের
পর থেকে বোয়াডার এলাকায়
সড়কে দিনকে দিন বাড়ছে গর্ত।
কোথাও নেই বিটুমিন, কোথাও
আবার ঢালাই উঠে গেছে। আবার
কোথাও কোথাও বিটুমিন আর ঢালাই এক
জায়গায় জড়ো হয়ে যেন
‘টিলা’ সৃষ্টি হয়েছে ।
লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি পরিবহন লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা এবং চট্টগ্রামের অনেক পরিবহন চাঁদপুর হয়ে চলাচল করে থাকে। চাঁদপুর থেকে নোয়াখালী যেতে এক ঘণ্টার পথ যেতে লাগছে প্রায় তিন ঘণ্টা। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি উঠেছে।
মোটরসাইকেল
চালক মো. রিদয় বলেন,
‘রায়পুরের বোয়াডার বাজার থেকে সদরের দালাল
বাজার পর্যন্ত সড়কের যে অবস্থা একজন
যাত্রীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে ৩০ মিনিটের
মধ্যে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাবে।
কিন্তু সেখানে দেড় ঘণ্টা সময়
লেগে যায়। এতে দুর্ঘটনা
এবং যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে।’
ট্রাকচালক
হুমায়ুন কবির বলেন, রায়পুর
থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে হাইওয়ে সড়কটি খুবই করুণ অবস্থা।
বড় বড় যে হাইড্রলিক
ট্রাকগুলো চলে এগুলোর ওজনে
সড়কটি নষ্ট হয়ে যায়।
বেশির ভাগে যে পরিমাণে
ঢালাই করার দরকার, সে
পরিমাণে করে নাই। এ
জন্য সড়কটি নষ্ট হওয়ায় দিনে
গাড়ি চালাই, রাতে বিশ্রাম নেই।’
কক্সবাজারগামী
বিআরটিসি চালক মো. ফরিদ
হোসেন বলেন, ‘গুরুত্বপুর্ণ হাইওয়ের যে অবস্থা গাড়ি
চালানোই বড় দায়। জায়গায়
জায়গায় যে অবস্থা গাড়ি
ঝাঁকি দেয়। কখন যে
গাড়ি উল্টে যায়, খুবই আতংকে
থাকি। এতে গাড়ি চালাতে
কষ্ট হয়। গাড়ির বেয়ারিং
নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া
শরীরের মারাত্নক ক্ষতি হয়, এতে করে
টানা দুইদিনও গাড়ি চালাতে পারি
না।’
প্রতিনিয়ত সড়কটিতে যাত্রীবাহী বাস-পণ্যবাহী ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন গর্তে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। গাড়ি ব্রেক করলে ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়ির স্প্রিং ও স্টেয়ারিংয়ের জয়েন্ট ভেঙে যায়। এতে চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিএনজি চালক মো. মাইনুদ্দিন বলেন, ‘সড়কটি ফোর লেন করলে খুব ভালো হয়। ছোট গাড়িগুলো চালানো যাইতেছে না। বড় বড় গর্ত, পিচ ঢালাই উঠে গেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। রায়পুর, দালাল বাজার, জকশিন, হাজিরপাড়া এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।
সড়কের
বামপাশ দিয়ে বালুবাহী ওভারলোড
গাড়ীগুলো যদি নিয়ন্ত্রিত না
হয়, তাহলে এই সড়ক কাজ
করার পরও নষ্ট হওয়ার
সম্ভবনা থাকবে। সড়কটি সংস্কারের বরাদ্ধের ফাইল সড়ক মন্ত্রনালয়ে
পাঠানো হয় বলে জানান
কুমিল্লা সড়ক বিভাগের ও
জনপথ বিভাগ।
চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর - নোয়াখালী মহাসড়ক চার লেন করার
জন্য সমীক্ষা করা হয়েছে। তবে
প্রকল্পটি সহসায় আলোর মুখ দেখছে
না বলে জানান লক্ষ্মীপুর
সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এবিষয়ে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য,
২০২২ সালের ২২ এপ্রিল প্রদেয়
ডিও লেটারের মাধ্যমে সাবেক সড়ক পরিবহন ও
সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি অগ্রগতি পায় ২০২৪ সালের
২৮ মে শেরেবাংলা নগরের
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেছিলেন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী
ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সেই
সভাতে কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর- বেগমগঞ্জ (আর-১৪০) ( লক্ষ্মীপুর
আন্ত: জেলা বাসস্ট্যান্ড হতে
বেগমগঞ্জ- চৌরাস্তা ) এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি-
রামগঞ্জ (আর-১৪২) ( সোনাইমুড়ি
হতে রামগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ লেন সড়ক
উন্নয়ন হওয়ার প্রকল্পে অনুমোদন করেছেন। প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার
কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি
প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছিলেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
প্রকল্পগুলো
বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে
১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৮
লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি
তহবিল থেকে ৬ হাজার
৫৪১ কোটি ৫২ লাখ
টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ
থেকে ৭ হাজার ৮৭৯
কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৩ কোটি
২৯ লাখ টাকা ব্যয়
হবে বলে জানানো হয়েছে।