Logo
Logo
×

সারাদেশ

ব্রহ্মপুত্র এখন বালুচর, নদে নির্ভশীলরা হয়ে পড়েছেন অসহায়

Icon

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম

ব্রহ্মপুত্র এখন বালুচর, নদে নির্ভশীলরা হয়ে পড়েছেন অসহায়

পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কড়ালগ্রাসী খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানি প্রবাহের যে কল কল ধ্বনি ছিল বর্ষা শেষ না হতেই তা হারিয়ে গেছে। ফলে সংকীর্ণ হয়েছে নদীর গতিপথ। নাব্য সংকটে নৌপথে চলা ফেরি ও নৌকাআটকে আছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিকভাবে ড্রেজিং না করায় নাব্য সংকটসহ মরা খালে পরিণত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নাব্যতা কমে যাওয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙি নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। 

নাব্য কমে যাওয়ায় তীরে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে তারা। যত্রতত্র শ্যালো মেশিন চালিত ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। ফলে শত শত  কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ডানতীর রক্ষা প্রকল্প এখন হুমকির মুখে। 

অপরদিকে সঠিকভাবে ড্রেজিংয়ের অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্যতা হারিয়ে এখন শুধুই বালুচর। শুকিয়ে যাওয়া চরের কোথাও কোথাও ফলানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম শাক-সবজি ও ফসল। দীর্ঘ সময় থেকে যে পরিবারগুলো মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ আসছিল তাদের মূল পেশা হারিয়ে দিনমজুরসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়েছে। ফলে বসবাসকারী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র যে একটি নদ তা শুধু বর্ষা মৌসুমেই বোঝা যায়। আর বর্ষা শেষ হলে মাইলের পর মাইল শুধু চর আর চর।

স্থানীয় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন (চিলমারী,নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়ন) ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভাজিত। ইউনিয়ন তিনটির অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে পণ্য কেনা-কাটার জন্য বাজার-ঘাট করতে হয় সপ্তাহে দুদিন।  নদীতে নৌকা চলাচল না করায় জোড়গাছ বাজারে আসতে হয় দূরের পথ হেঁটে। এছাড়া চিলমারী থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর যেতে ফেরি এবং নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে দ্বিগুনেরও বেশী নিয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে সময় এবং আর্থিক ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী ফরহাদ আলী বলেন, চরাঞ্চলে নৌকা পর্যন্ত তেল আনতে আগে ড্রামপ্রতি তেলের ভাড়া ছিল ২০টাকা। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তা বেড়েছে ১০০টাকা। 

নদের তীরবর্তী এলাকায় প্রায় দুই হাজারের বেশী মৎসজীবীর বসবাস। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। 

মাঝিপাড়া এলাকার ফুলেল মাঝি জানান, ‘ব্রহ্মপুত্র এখন মরা নদ। এখানে কোনো মাছ নেই। সারা দিন জাল ফেলে ২০-৩০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না। তাই আমরা বড় কষ্টে আছে। মাছ না থাকায় জেলেদের অনেকে দেশের বিভিন্ন শহরে রিকশা চালান, কেউ দোকানে, কেউবা মাটি কাটার কাজ করছেন’।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুকিয়ে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা চলার পথে নানাবিধ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদকে পরিকল্পিতভাবে খনন করা হলে নদটি এলাকাবাসীর জন্য আশির্বাদ হয়ে থাকত। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্য ফিরিয়ে আনা হলে এ নদী আবার প্রাণের স্পন্দন ফিরে পাবে। উপকৃত হবে চরাঞ্চলীয় মানুষসহ গোটা উপজেলার মানুষ।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম