ঈশ্বরদীর এক ইউনিয়নেই অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে সরকারি আবাদি জমির মাটি কেটে তৈরি হয়েছে অর্ধশত ইটভাটা। লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার কারণে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। আর এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ও কৃষকেরা। অবিলম্বে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের অবৈধ সব ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনা জেলায় ১৭৩টি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ৩০টি ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও ১৪৩টি ইটভাটা চলছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৫৫টি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ঈশ্বরদীর বেশিরভাগ ইটভাটা লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষি জমিতে অবস্থিত।
এ বিষয়ে লক্ষীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকিবুল ইসলাম জানান, আমরা শুধু নদী এলাকার ভিতরে যে মাটি কাটা হয় সেটা দেখতে পারি। অন্যদিকে দেখার সুযোগ নেই। আমরা গত এক মাসে ৭জনকে মাটি কাটার অপরাধে ১৫ দিন করে জেল ও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শুধু যে ইটভাটায় সরবরাহের জন্য ফসলী জমির মাটি নেওয়া হচ্ছে তা নয়, নদী ও সরকারি খাস জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক-ট্রাক্টর দিয়ে এসব মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। সরজমিনে গণমাধ্যমকর্মীরা ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে গেলে এ চিত্র দেখতে পান। দূর্গম অঞ্চল হওয়ায় নির্বিঘ্নে এসব অপকর্ম মাসের পর মাস চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকেরা। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকেরা। তারা অবিলম্বে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের অবৈধ সব ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে স্থানীয় নৌ পুলিশের এ বিষয়ে দায়িত্ব থাকলেও তাদের সঙ্গে গোপন আঁতাত থাকায় তারা এসব বিষয়ে সব জেনেও নিরব ভূমিকা পালন করেন বলে দাবি করেছেন একাধিক সূত্র।
কৃষি আবাদ আর সবজি উৎপাদনে বেশ সমৃদ্ধ ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন। সেই কৃষি আবাদের শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে অবৈধ অর্ধশত ইটভাটা। এসব ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় মাটি। লক্ষীকুন্ডায় অবৈধ এসব ইটভাটায় সরবরাহের জন্য শত শত বিঘা জমির ফসলসহ মাটি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এসব কারণে ফসলী জমি কমে যাওয়া এবং ইটভাটা থেকে পরিবেশ বিনষ্টকারী ধোঁয়া নির্গত হওয়ার কারণে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে সবজি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোনো কুল-কিনারা করতে পারছেন না তারা।
লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, কামালপুর, বিলকেদার, বাবুলচারাসহ বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার এই দৃশ্য চোখে পড়ে। এছাড়া ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ। ইটভাটায় পোড়ানো সেসব জ্বালানী থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মারাত্বক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এতে চরমভাবে ক্ষতি হচ্ছে আশে-পাশের কৃষি আবাদ। ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে পার্শ্ববর্তী শত শত একর জমির আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই প্রায় ৮/১০টি স্থানে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিবছর অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষক নেতা আবুল হাসেম জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাস বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। ফসলী জমি নষ্ট করে ঈশ্বরদীতে কোন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। আগেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই অবৈধ ইটভাটায় উচ্ছদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।