মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার
তোজাম্মেল আযম, মেহেরপুর
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে মেহেরপুরের মুজিবনগর ঐতিহাসিক স্থান। ইংরেজ শাসনামলে মুজিবনগরের ভবেরপাড়া ও বল্লভপুরে দুটি চ্যারিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন খ্রিষ্টান মিশনারিরা, যা এখনো সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পর ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপিত হয়। ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও নানা সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর কেটে গেলেও অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। অস্ত্রোপচারকক্ষ (ওটি) বন্ধ পড়ে থাকায় এর যন্ত্রগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে শুধু অস্ত্রোপচারই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি শুরুতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট করা হলেও ২০১৮ সালে সরকার ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। তবে জনবল অনুমোদনসহ ৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধা চালু করা হয়নি। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে এখানে ৩৬ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে এখানে কর্মরত রয়েছেন ১৭ জনের স্থলে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক। তিনজন অন্যত্র আছেন সংযুক্তিতে। একজন আছেন প্রশিক্ষণে। ৪ জন আছেন কর্মস্থলে। চারজনে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান কখনো ঢাকায় প্রশিক্ষণে থাকেন, আবার কখনো জেলা শহরের বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন।
সূত্রে জানা যায়, এখানে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের আটটি পদই শূন্য। আয়ার পাঁচটি পদ থাকলেও মাত্র দুজন কর্মরত রয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা ১২ জন। তবে মাত্র তিনজন আছেন। মাত্র একটি এক্স-রে যন্ত্র, সেটিও তিন বছর ধরে বিকল পড়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জনবলসংকটে রোগীদের অতি জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি এক্স-রের মতো সাধারণ পরীক্ষাও এখানে হয় না। রক্তের নানা পরীক্ষাও হাসপাতালে করানো সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ রোগীকে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এতে করে নিম্ন আয়ের রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগ রোগীকে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের গত ২০ তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে অন্তর্বিভাগে ৯২৩১ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৩০ জন। ২০ ডিসেম্বর হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৫ জন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অভাবে সিজারিয়ানসহ যেকোনো কঠিন রোগের জন্য জেলা সদরে পাঠানো হয় রোগীদের।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, সার্জারি চিকিৎসক, অবেদনবিদ থাকলে ছোট-বড় অস্ত্রোপচার এখানেই করা সম্ভব। ওটির যন্ত্রপাতি ১৫ বছরে একটিবারও ব্যবহার করা হয়নি। এতে যন্ত্রপাতির বর্তমান অবস্থা কেমন, তা বলা মুশকিল। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। গাইনি কনসালট্যান্ট সুরাইয়া শারমিন সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার মেডিকেল অফিসার সুপ্রিয়া গুপ্তার চেম্বারের সামনে দেখা গেল নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) মাকসুদুর রহমানকে সব রোগের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়া খাতুন জানান, এখানে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। সেবিকারাই বেশি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্যারাসিটামল, ভিটামিন বড়ি, গ্যাসের ওষুধ ছাড়া সবই বাইরে থেকে কেনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য চাহিদা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে লিখিত আকারে দফায় দফায় জানানো হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি ব্যাবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নতুন যন্ত্রপাতি এসেছে। টেকনিশিয়ান এসে সংযোগ দিয়ে যাবেন।