Logo
Logo
×

সারাদেশ

অবশেষে জানা গেল মুক্তিযোদ্ধা কানুকে লাঞ্ছিতের কারণ

Icon

চৌদ্দগ্রাম দ. কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ পিএম

অবশেষে জানা গেল মুক্তিযোদ্ধা কানুকে লাঞ্ছিতের কারণ

ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও বিক্ষোভ হয়েছে, ইনসেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা নিয়ে গত দুই দিন ধরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনলাইন তো বটেই, ঘটনাটির প্রতিক্রিয়া এবার অফলাইনেও দেখা যাচ্ছে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে, এমনকি প্রধান উপদেষ্টাও এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোট কথা, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ, নিন্দা ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

তবে আরেকটি পক্ষ বলছে, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে জুতার মালা পরানো যেমন ঠিক হয়নি; তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে যে সাত খুন মাফ, সেটাও তো ঠিক নয়। কারণ আব্দুল হাই কানু সাবেক স্বৈরশাসকের দোসর। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের নেতা ছিলেন। তার নামে হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বাভাবিক কারণেই এই পক্ষটি সরকার তথা প্রশাসনের কাঁধে দায় চাপিয়ে বলছে, যার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা- এমনকি হত্যা মামলাও রয়েছে, সে কীভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে; বিগত চার মাসেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি? তাদের যুক্তি- জনগণ যদি অপরাধের বিচার না পায় তাহলে তো আইন হাতে তুলে নিবেই। সরকার কেন জনগণকে সে সুযোগ করে দিচ্ছে?

এই যখন অবস্থা তখন মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে কানুকে হেনস্তা করার একটি কারণ জানানো হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।  

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে তাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, ২০০৮ সালে স্থানীয় কুলিয়ারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন চলাকালীন স্থানীয় আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করেন আলোচিত আওয়ামী নেতা কানু। শুধু তাই নয়, এই মুক্তিযোদ্ধা ওই ব্যক্তিকে টেনে নিয়ে পানিতে ফেলে অপমান-অপদস্ত করেন। চলতি বছর আব্দুল হালিম মারা যান। 

জানা যায়, ভাইয়ের ওই অপমানকে কেন্দ্র করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী কুলিয়ারা গ্রামের অভিযুক্ত আবুল হাশেম মুক্তিযোদ্ধা কানুকে স্থানীয় বাজারে দেখতে পান গত ২২ ডিসেম্বর। এরপর তাকে জোরপূর্বক ধরে সেই কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এনে স্থানীয় লোকজনের সামনে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজন ঘটনার ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা ভাইরাল হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য প্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিকসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে। 

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আকতার উজ জামান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় মুক্তিযোদ্ধা কানু জেল খেটেছেন বলেও জানান ওসি।

সূত্রে আরও জানা যায়, সাবেক রেলমন্ত্রী মজিবুল হকের কথা না মেনে নমিনেশন বাণিজ্যের বাইরে ইউপি নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন কানু। যার ফলে তাকে সাবেক এমপি মজিবুল হকের লোকেরা বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করে; এমনকি তাকে বাড়ি-ছাড়া পর্যন্ত করা হয়। তাদের ভয়ে তিনি দীর্ঘ ১০ বছর বাড়িতে ছিলেন না।

আবুল হাই কানুর স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, আমার স্বামী  প্রায় ১০ বছর বাড়িতে আসতে পারেনি। রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বাড়িতে এসে আত্মগোপন করে ছিলেন। তিনি মজিবুল হকের ভয়ে ঘর থেকে বের হতেন না। তবে গত ২২ ডিসেম্বর ওষুধের জন্য বের হলে আবুল হাসেম গংরা তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে লাঞ্ছিত করেছে। আমি এর বিচার চাই। 

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত তাবাসসুম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ৫ জনকে সনাক্ত করে আটক করে জেল হাজতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকিদেরকেও আটক করা হবে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম