ছাত্র-জনতার আন্দোলন
হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন চান্দিনার ফয়েজ

চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ পিএম

জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের ছোড়া ছররাগুলিতে মারাত্মক আহত হয় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র মো. ফয়েজ আলম। তার সারা দেহে বিদ্ধ হয় ৪০টি গুলি। এর মধ্যে একটি ছররাগুলি কেড়ে নেয় তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি। হতদরিদ্র ও এতিম ওই মাদ্রাসাছাত্র এখনো হাসপাতালের বিছানায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ফয়েজের পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পারুয়ারা গ্রামে হলেও জন্মের পর থেকেই নানাবাড়ি চান্দিনার হারং গ্রামে বসবাস করে। ১২ বছর আগে তিন মাস বয়সি বোনকে কোলে রেখে মা কুহিনুর আক্তার মারা যান।
শ্রমিক বাবা জাহাঙ্গীর আলম গাজী অন্যত্র বিয়ে করেন। আর দুই ভাইবোনের ঠিকানা হয় নানাবাড়ি হারং গ্রামে। নানা জীবিত না থাকায় নানিই দুই এতিম ভাইবোনের একমাত্র ভরসা।
ফয়েজ চান্দিনার হারং সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় দাখিল শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বোন তাহনা হারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পরীক্ষা দেয়। দুই মামা ইসমাইল ও ইউনুছ পেশায় রিকশাচালক। দরিদ্র ওই পরিবার থেকে শৈশবকালে নানি জোগার করত তার লেখাপড়ার খরচ। আর কৈশোরে নিজেই একটি মসজিদে মোয়াজ্জেমের কাজ করে নিজের ও বোনের লেখাপড়ার খরচ জোগার করত ফয়েজ।
১৮ জুলাই রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনকালে পুলিশের ছোড়া ছররাগুলিতে মারাত্মক আহত হয় এই ছাত্র। আহত হয়েই পালটে যায় তার জীবনের গতিপথ। বছরের শেষ দিকে সহপাঠীরা যখন পরীক্ষার হলে, আর সেই সময় হাসপাতালের বিছানায় অপেক্ষার প্রহর গুনে নীরবে চোখের পানি ঝড়াচ্ছে ফয়েজ।
ফয়েজ আলম বলেন, ১৮ জুলাই অন্য ছাত্রদের সঙ্গে সে-ও সাইনবোর্ড এলাকায় যায়। হঠাৎ বৃষ্টির মতো ছররাগুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকা অন্য আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে সাইনবোর্ডের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই হাসপাতালে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের তোপের মুখে চিকিৎসা নিতে পারেনি ফয়েজ আলমসহ অন্য আহতরা। অবশেষে দূরসম্পর্কের মামার সানারপাড়ের বাসায় টানা ১৮ দিন চিকিৎসা নেয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৭ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। সেখানে চলে তার উন্নত চিকিৎসা। সব চিকিৎসার পর বাদ সাধে ডান চোখ। ওই চোখের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের ১নং বেডে চিকিৎসাধীন ফয়েজ।
ফয়েজ আলম আরও বলেন, টানা ১৮ দিন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে এক খালার থেকেই নিয়েছি ১ লাখ টাকা। বাকি টাকাগুলো বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে চিকিৎসায় ব্যয় করেছি। জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকা পাই। ওই টাকায় ৫০ হাজার টাকা ঋণমুক্ত হয়েছি। এখনো আমার ঋণ দেড় লাখ টাকা।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্নিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল কাদেরসহ চার সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে ফয়েজের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।