Logo
Logo
×

সারাদেশ

বড়পুকুরিয়ায় ফের কয়লা বিক্রির চেষ্টা, ঝুঁকিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন

Icon

মুসলিমুর রহমান, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ এএম

বড়পুকুরিয়ায় ফের কয়লা বিক্রির চেষ্টা, ঝুঁকিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লা খোলাবাজারে বিক্রির জন্য আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছে পুরোনো সেই চক্রটি। কয়লা সংরক্ষণে ইয়ার্ড ঘাটতি ও পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে দেখিয়ে চক্রটি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করছে। নিয়োগ দিয়েছে লবিস্টও। ওই চক্রে কয়লাখনি ও তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা, বাইরের ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত আছে। খনির একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলোর মতে, খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি করা হলে সরকার সামান্য কিছু টাকা পাবে, তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুফে নেবে চক্রটি। বিপরীতে বড় বিপদে পড়বে ওই কয়লার ওপর নির্ভরশীল বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন কয়েক মাস বন্ধ ছিল।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কয়লার যথাযথ ব্যবহার করতে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল ইউনিট সচল করা দরকার এবং কেন ইউনিটগুলো উৎপাদনের লক্ষ্য ছুঁতে পারছে না সেদিকে নজর দেওয়া দরকার-সেখানে খোলাবাজারে কয়লা বিক্রির চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা সোলায়মান সামি যুগান্তরকে জানান, বড়পুকুরিয়ার কয়লার মালিক পিডিবি। কিন্তু নানা অজুহাতে উচ্চপদস্থদের কাছে ঘুর ঘুর করছে সুযোগ সন্ধানীরা। খোলাবাজারে কয়লা বিক্রিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। তিনি বলেন, পাশের প্লান্টে ৩ ইউনিটে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে সাকুল্যে বিদ্যুৎ মিলছে মাত্র ২০০ মেগাওয়াট। এ ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। পুরোমাত্রায় উৎপাদনে গেলে বর্তমানে যে কয়লা তোলা হচ্ছে সেটিই প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেত। কয়লার স্তূপ জমার প্রশ্নই আসত না।

সোলায়মান সামি বলেন, খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি করার কারণেই ২০১৮ সালে দীর্ঘদিন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। ওই বছরের ২৪ জুলাই ১৯ জনকে আসামি করে মামলা হয় কয়লা চুরির অভিযোগে। অভিযোগ ওঠে, খনি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা খোলাবাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে দুদক। যে কারণে মন্ত্রণালয় খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি বন্ধ করে। সিদ্ধান্ত নেয় বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা শুধু সন্নিকটস্থ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে।

খনিসংশ্লিষ্টরা জানান, কয়লা খনিতে সেডিমেন্টসহ কোল ইয়ার্ড রয়েছে তিনটি এবং তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি। যেগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ টন। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা ইয়ার্ডে রয়েছে তা দিয়ে দুই মাস বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। কয়লা উত্তোলনে নতুন ফেইজ নির্মাণেও সময় লাগে প্রায় দুমাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও নতুন দুটি ইউনিট স্থাপন করা প্রয়োজন। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ যেমন সম্ভব হবে তেমনি কয়লারও যথাযথ ব্যবহার হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দুষ্টচক্র বা মধ্যস্বত্বভোগীরা যতই চেষ্টা করুক, বড়পুকুরিয়ার কয়লা শুধু পাওয়ার প্লান্টে ব্যবহারের জন্য। এ মর্মে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে। এ বিষয়ে কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে কয়েক দিন তার দপ্তরে গেলেও তিনি কথা বলেননি। ফোন করলেও ধরেননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম