Logo
Logo
×

সারাদেশ

প্রশিক্ষণের নামে খুলনায় পিটিআই সুপারের ‘পুকুর চুরি’

Icon

আহমদ মুসা রঞ্জু, খুলনা

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ এএম

প্রশিক্ষণের নামে খুলনায় পিটিআই সুপারের ‘পুকুর চুরি’

খুলনা প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট মোল্যা ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া প্রশিক্ষণার্থী দেখিয়ে প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলন করেছেন সরকারি কোষাগার থেকে। ভাউচারে প্রশিক্ষণার্থীদের জাল স্বাক্ষর দিয়ে কোটির বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন সুপার। সেই টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে ভোগ করছেন লভ্যাংশ।

খুলনা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় ২০২৩-২৪ (জানুয়ারি-অক্টোবর) এবং ২০২৪-২৫ (জুলাই-এপ্রিল) সেশনে মোট ২৮০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হয় পিটিআইতে। পরিমার্জিত ডিপিএড (বিটিপিটি) প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা, নাস্তা, কিট অ্যালাউন্স এবং দুপুরে খাবার বাবদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে খুলনা পিটিআইয়ের অনুকূলে ১৩ জুন ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ও ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৬শ টাকা বরাদ্দ হয়। একই সঙ্গে ২২ আগস্ট ১২০ প্রশিক্ষণার্থী ও ১৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর জন্য দ্বিতীয় দফায় ২৪ লাখ ১১ হাজার ৫২০ টাকা বরাদ্দ দেয়।

জুলাই-২৪ থেকে এপ্রিল-২৫ সেশনে ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হওয়ার আগেই ভাতার বরাদ্দ ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৬শ টাকা বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে তুলে নেন পিটিআই সুপার। এই টাকা উত্তোলনের ভাউচারে ১৫০ জনের স্বাক্ষরই জাল বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ১ জুলাই থেকে। অথচ প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে ১৯ জুন। আগাম তুলে নেওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে রাখেন। সেখান থেকে পাওয়া লভ্যাংশও তিনি ভোগ করেন। সাধারণত তিন/চার মাস পরপর প্রশিক্ষণের ভাতা বিতরণ করা হয়। ওই সময় টাকা তোলার নিয়ম। তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবেই ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রশিক্ষণের আগেই প্রশিক্ষণার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে এককালীন সব বরাদ্দ তুলে নিয়েছেন।

এ ছাড়া টাকা উত্তোলনের ভাউচারে ১৫০ জনের মধ্যে ৯ জন প্রশিক্ষণার্থীর ভুয়া নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ ১৯ জুন পর্যন্ত ভর্তি হয় ১৪১ জন প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একইভাবে জানুয়ারি ’২৪ থেকে অক্টোবর ’২৪ সেশনে ১২০ জনের জন্য ২২ আগস্ট’২৪ তারিখে বরাদ্দ ২৪ লাখ ১১ হাজার ৫২০ টাকা জাল স্বাক্ষর দিয়ে উঠিয়ে তুলে নেওয়া হয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন অফিসের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মুনির আহমেদ। অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশিক্ষণার্থী (চলমান) বলেন, ‘টাকা দেওয়া হয় ধাপে ধাপে। আমাদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা অগ্রিম তোলা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’

এদিকে খুলনা পিটিআইতে রাজস্ব খাতে ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অথচ জুলাই ২৪ থেকে এপ্রিল ২৫ সেশনে ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীর বরাদ্দের সঙ্গে ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্যও টাকা তোলা হয়েছে। অতিরিক্ত ৮ জনের নাম ব্যবহার করে তোলা টাকার কোনো হিসাব নেই। 

পিটিআইসূত্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষণার্থীদের হোস্টেলে থাকার জন্য জনপ্রতি ১৮শ করে টাকা নেওয়া হয়। অথচ অধিকাংশ শিক্ষকই থাকেন হোস্টেলের বাইরে। হোস্টেল বাবদ নেওয়া এই টাকার কোনো হিসাব তিনি দেন না। অন্যদিকে অনেক শিক্ষক নানা সমস্যার কারণে ৩/৪ মাস পরে ভর্তি বাতিল করে ফিরে যান। তাদের স্থলে নতুন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করেন। চলে যাওয়া শিক্ষকদের ভর্তির টাকা ফেরত না দিয়ে নতুনদের কাছ থেকেও অনুরূপভাবে টাকা আদায় করা হয়। একইসঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ ভাতার সরকারি টাকাও সুপার ফেরত নেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানিয়েছেন। ভর্তি ও প্রশিক্ষণের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে সুপারের নয়ছয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ২০২৩-২৪ (জানুয়ারি-অক্টোবর) সেশনে রূপসা উপজেলার আনন্দ নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষক মিজানুর রহমান। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য ভেন্যু হিসাবে পিটিআই ব্যবহার করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ এখানকার প্রশিক্ষণ কিটস, নাস্তাসহ দুপুর ও রাতের খাবার মান নিম্নমানের। এসব বিষয়ে মোল্যা ফরিদ আহম্মেদের সঙ্গে কথা বলতে পিটিআইতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

তিনি বলেন, ভুয়া কারও নাম ব্যবহার হয়নি। অনলাইনে আবেদনকারীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়। অগ্রিম টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাক্ষর জাল করে এ কাজ করা হয়েছে কি না কাগজপত্র যাচাই করে তবে বলতে পারব। অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি, আমি তো ঢাকায় যাচ্ছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম