
বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা চরের কৃষকরা গাইঞ্জা ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অসময়ে বন্য ও অন্যান্য ফসলে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন কমছে এ ধানের আবাদ। ফলে সুস্বাদু এ ধানের ভাত থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা গাইঞ্জা ধান চাষাবাদ বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা এবং বাঙালি নদীতে বন্যার পরপরই পলিমাটি পরে। আর এসব পলিমাটিতে কোনো চাষ ছাড়াই কৃষকরা স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ করেন; যা আদিকাল থেকেই গাইঞ্জা ধান নামে পরিচিত। গাইঞ্জা ধানের বিশেষত্ব হচ্ছে- এটি রোপণের পরে কোনো পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। রাসায়নিক সার প্রয়োগেরও প্রয়োজন হয় না।
এ ধানের চাল বেশ সরু। সম্পূর্ণ অর্গানিক ধান হওয়ার এর ভাত খেতে খুবই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত। আর তাই চরাঞ্চলের কৃষকেরা আদিকাল থেকেই এ ধানের চাষ করেন।
উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা গাইঞ্জা ধান কর্তন, তা পরিবহণ করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়িতে মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির কৃষাণীরাও এ ধান সিদ্ধ করে তা রোদে শুকিয়ে গোলাজাত করতে ব্যস্ত রয়েছেন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের কৃষক রঞ্জু মিয়া বলেন, সদর ইউনিয়নের নিজতিতপরল মৌজায় জেগে ওঠা চরের ১৫ বিঘা জমিতে গাইঞ্জা ধানের আবাদ করেছিলাম। তার মধ্যে ১০ বিঘা জমির গাইঞ্জা ধান অসময়ের বন্যায় নষ্ট হয়েছে। বাকি জমির ধান কর্তন করেছি এবং সেখানে পেঁয়াজ চাষ করছি। এ বছর বিঘাপ্রতি সাত মণ করে ধান পেয়েছি।
তিনি বলেন, গাইঞ্জা ধানের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার। এ ধানের ভাতের সঙ্গে মাসকলাইয়ের ডাল আর আলু ভর্তা হলে আর কিছুই লাগে না। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের তুলনায় এ জাতের ধানের ফলন একটু কম হয়। তাই অনেকেই গাইঞ্জা ধান চাষ করা ছেড়ে দিচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছর আগেও সারিয়াকান্দিতে গাইঞ্জা ধানের আবাদ হয়েছিল ২৭শ হেক্টর। গত বছর যা কমে ১৮শ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ বছরও গাইঞ্জা ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮শ হেক্টর; কিন্তু মাত্র ১৪শ হেক্টর জমিতে গাইঞ্জা ধানের আবাদ হয়েছে। বাজারে প্রতি মণ গাইঞ্জা ধান ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকরা পাঁচ থেকে সাত মণ পর্যন্ত এ ধানের ফলন পাচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের অর্থকরী ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তাছাড়া এ বছর বন্যা কম হওয়ায় গাইঞ্জা চাষের জন্য কাঙ্ক্ষিত পলিমাটির জমি সৃষ্টি হয়নি। তাই গাইঞ্জা ধানের আবাদ কম হচ্ছে। তবে যেটুকু জমিতে আবাদ হয়েছে সেখানে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।