সাভার-আশুলিয়ায় এক রাতে তিন ডাকাতি
সাভার, আশুলিয়া ও জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
সাভার ও আশুলিয়ায় এক রাতেই যাত্রীবাহী বাস, বিয়ের গাড়ি ও একটি প্রাইভেটকারে ডাকাতি হয়েছে। আলাদা এসব ঘটনায় ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন চারজন। শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময় সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনিতে যাত্রীবাহী বাস, আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু সড়কে বিয়ের গাড়ি ও কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি শাখা সড়কে প্রাইভেটকারে ডাকাতি হয়।
বাসে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে আহতদের একজন শামীম হোসেন। তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার কালিকাপুর এলাকার মৃত আজগর হোসেনের ছেলে। আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকায় ভাড়া থেকে তিনি ঢাকার একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন বলে জানা গেছে। আহত অন্যদের নাম জানা যায়নি।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় বাসের যাত্রী হারুন-অর-রশিদ জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তিনি উলাইল স্ট্যান্ড থেকে ওয়েলকাম পরিবহণের একটি গাড়িতে ওঠেন। বাসটিতে মহিলাদের আসনে আগে থেকেই তিন পুরুষ যাত্রী বসে ছিলেন। এ সময় তাদের কথামতো তিনি জানালার পাশের সিটে বসেন। এর কিছুক্ষণ পর হঠাত্ তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে দঁাড়িয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা যাত্রীদের অসে্ত্রর মুখে জিম্মি করে সবকিছু কেড়ে নেয়। কয়েকজন তাদের সঙ্গে দস্তাদসি্ত করলে তাদের ছুরিকাঘাত করে জখম করে। এতে অন্তত চারজন আহত হন। পরে সব যাত্রী আতঙ্কে যার কাছে যা ছিল সব ডাকাতদের দিয়ে দেয়। সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ডাকাতরা নেমে চলে যায়।
ডাকাতি হওয়া এই বাসের পেছনের বাসে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার দ্বীপ। তিনি বলেন, এই রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়ত করেন। এখানে আগে কেউ হেঁটে বা রিকশায় গেলে তারা ছিনতাইয়ের শিকার হতেন। এখন যদি চলন্ত বাসেও এই ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ডা. হাসান মাহবুব বলেন, শামীম নামে ছুরিকাঘাতে আহত একজনকে আনা হয়েছে। তার বুকসহ শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাতেই আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু সড়কে গাছ ফেলে একটি বিয়ের গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। গাড়িতে থাকা যাত্রীরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে রাত ২টার দিকে একটি মিনিবাসে তারা আশুলিয়ার সদরপুর এসেছিলেন। মিনিবাসটি আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু রোড এলাকায় পঁেৌছলে রাস্তায় গাছ ফেলে একদল অস্ত্রধারী ডাকাত বাসটির গতিরোধ করে। পরে বাসে থাকা সবাইকে মারধর করে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুটপাট করে পালিয়ে যায়।
এছাড়া রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া-টঙ্গাবাড়ি শাখা সড়কের দুর্গাপুর এলাকার ফোরস্পার্ক পোশাক কারখানাসংলগ্ন এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর এক স্বজন আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ডাকাতির শিকার রেজাউল করিম আশুলিয়া দক্ষিণ গাজীরচট এলাকার এনআরএন নিটিং অ্যান্ড গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, নিজের প্রাইভেটকারে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ঢাকার মিরপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তিনি। ঘটনাস্থলে ৩-৪ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার গতিরোধ করে। পরে তারা গাড়ির সামনে ও দুই পাশের গ্লাস ভাঙচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় রেজাউল করিমের সঙ্গে থাকা ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা, একটি আইফোন ও একটি রিয়েলমি ফোন লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
এদিকে ঘনঘন ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন ব্যস্ততম এই শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শুক্রবার রাতে একটি বিয়ের গাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়েছি। তবে ডাকাতরা তেমন কিছু নিতে পারেনি। এছাড়া অপর ঘটনায় একটি প্রাইভেটকার আটকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেটা ডাকাতি নয়। সব বিষয় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির বলেন, ডাকাতদের গ্রেফতারে পুলিশ সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে ডাকাতদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।