পবার দুই হিমাগারে অভিযান, মজুত আলু ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ এএম
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর পবায় দুটি হিমাগার থেকে সব আলু বের করে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ আলু কিনেছেন। খোলাবাজারে এ আলু ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। রোববার ও মঙ্গলবার হিমাগার দুটিতে অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, আলুর বাজারে কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মজুত করা আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না- এমন আদেশও দিয়েছে সরকার। কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগার নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করে রেখেছে।
রোববার সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) জাহিদ হাসান পবার নওহাটা পৌর এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ৬০ কেজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলা বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। ওই টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এরপর তারা একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে অভিযান চালান। এর আগেই হিমাগার কর্মকর্তারা পালিয়ে যান।
ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট ঘোষণা দিয়ে আসেন যে, বিজয় দিবসের পরের দিন অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ফের অভিযান চালানো হবে। পরদিন সোমবার ওই হিমাগারে দেখা যায়, আলু বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রমিকরা আলু বাছাইয়ের কাজ করছেন। আগের দিন হিমাগারের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেছিলেন, তাদের হিমাগারে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বস্তা আলু আছে। ওই আলু কৃষকের। তারা বিক্রি না করলে তাদের কিছু করার নেই। অভিযানের সময় পালানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে সাধারণত তারা চলে যান। দুজন কর্মচারী ছিলেন। তাদের আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই হিমাগারে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব মোট ২ হাজার ৩০০ বস্তা আলু জব্দ করেন। খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে আলু কেনার জন্য ভিড় করেন। এ সময় জেলার মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাটি এলাকার রাশেদুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী এসে বাদ সাধেন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
রাশেদুল হক বলেন, ‘এই হিমাগারে তার ১২ হাজার বস্তা আলু ছিল। সর্বশেষ ১ হাজার ৫০০ বস্তা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো তার ৩৪ টাকা কেজি দরে কেনা ছিল। হিমাগারে রেখে কেজিতে ৪৫ টাকা খরচ পড়েছে। তিনি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। এখন তাকে ‘জবাই’ করে সেই আলু অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৯ টাকায় বিক্রি করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘যারা এখন আলু কিনলেন তারা তো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করবেন। তার চেয়ে জনগণকে এই ন্যায্য দামে দিলে তিনি খুশি হতেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবার ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের দায়িত্ব হিমাগার খালি করে দেওয়া। যাদের কাছে আলু বিক্রি করা হয়েছে তাদের ফোন নম্বর রেখে দেওয়া হয়েছে। এই আলু ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দুটি হিমাগার খালি করা হয়েছে। অন্য হিমাগারগুলোতেও অভিযান চলবে।
শুধু রাজশাহী জেলাতেই ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতি বস্তায় থাকে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এখনো অনেক হিমাগারে আলু মজুত আছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শনের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এই আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা।
তবে মঙ্গলবার রাজশাহী শহরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও পুরাতন আলু ৭০ টাকা কেজির কম দামে বিক্রি হচ্ছে না। আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।