সৎ ছেলেদের নির্যাতনে হাসপাতালে বিধবা
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ পিএম
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সৎ ছেলেদের নির্যাতনে হোসনেআরা বেগম (৪০) নামে এক বিধবা নারীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সবশেষ শনিবার সন্ধ্যায় পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয় তাকে।
গুরুতর আহত হয়ে তিনি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চার মাস আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সৎ ছেলেদের এমন নির্যাতনে তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। হোসনেআরা উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মৃত আব্দুস শহিদের স্ত্রী।
রোববার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বিধবা হোসনেআরা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস শহিদের স্ত্রী মারা যায়। এরপর পারিবারিকভাবে শহিদের সঙ্গে তার (হোসনেআরার) বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। এ দুই জনসহ আগের সংসারের চার ছেলে নিয়ে তাদের সুখে-শান্তিতে দিন কাটছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে স্বামী শহিদ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকে তাদের অশান্তি শুরু হয়। বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে সৎ ছেলেদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন শুরু হয় তাদের উপর।
সৎ ছেলে রিপন, হোসেন ও সবুজ তাকে শারীরিকভাবে বেশ কয়েকবার মারধরও করেন। এনিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে তিনি মৌখিক অভিযোগও করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় ওই তিন ছেলে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে মারজাহান বেগম ও ছেলে সোহাগকেও মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে তার ভাই নুর হোসেন তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হোসনেআরা বেগমের অভিযোগ, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে স্বামীর সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে সৎ ছেলেরা তাকে একের পর এক নির্যাতন করছেন। সৎ ছেলেদের এমন কর্মকান্ডে দুই সন্তান নিয়ে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
হোসনেআরা বেগমের মেয়ে উপজেলার উদয়ন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজাহান বেগম জানান, সুন্দরভাবে লেখা-পড়া চলে আসলেও বাবা মারা যাওয়ার পর তার জীবনে অমাবশ্যার মেঘ নেমে আসে। বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ বড় ভাইয়েরা ভোগ করলেও তারা তার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা দিতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানায়। এতে করে ফরম পূরণে ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় তার ফরম পূরণ হয়।
আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমন সৎ ভাই এ পৃথীবিতে যেন আর কারও না থাকে।
হোসনেআরা বেগমের ভাই নুর হোসেন জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর তার বোন সৎ ছেলেদের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। একজন বিধবা নারীর উপর সৎ ছেলেদের এমন নির্যাতন খুবই অমানবিক। এসব ঘটনায় আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে বিধবার সৎ ছেলে মো. রিপন জানান, হোসনেআরা বেগমকে নির্যাতনের অভিযোগটি ভিত্তিহীন। বাড়ির একটি গাছ কর্তন নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। মারধরের কথা সঠিক নয়।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে থানায় এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।