বৈসাবি উৎসবের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা, রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ এএম
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসবের দিন পরীক্ষা রেখে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিন জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। তবে এই রুটিন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে পিসিপি নেতারা ‘বৈ-সা-বি’ (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সাংক্রান-বিষু) উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, প্রত্যেক বছর ১২ এপ্রিল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের এই ঐতিহ্যবাহী প্রধান সমাজিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দিনসমূহে পাহাড়ে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশাজীবী মানুষ জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে ধারণ করে, নিজ নিজ সংস্কৃতি চর্চা করে থাকে এবং আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। যার মাধ্যমে পাহাড়ে সকল জাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মিলন ঘটে।
২০২৫ সালেও ১২ এপ্রিল থেকে এই উৎসব শুরু হবে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা রুটিনে আমরা দেখলাম ১৩ এপ্রিল এবং ১৫ এপ্রিল যথাক্রমে বাংলা ২য় পত্র আর ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মাঝে ১৪ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। মূলত এই দিনগুলোতেই পাহাড়ি সম্প্রদায়গুলো উৎসবটি পালন করে থাকে। ফলে এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সামনে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে তাদের নিজ নিজ উৎসব পালন করার সুযোগ পাবে না। সুতরাং এই রুটিন অবশ্যই পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘বৈ-সা-বি’ উৎসবকে বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল মন্তব্য করে তারা বলেন, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় এ দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক উৎসবের বিষয়টা বিবেচনা করা হয়নি। এসময়টায় পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংখো, বম, তনচংগ্যা, সাঁওতাল, গুরখা, অহোমী ও রাখাইনসহ ১০ ভাষা-ভাষী ১৫টি জাতিসত্তার মানুষেরা নববর্ষকে নিজ নিজ স্বকীয় আচারে বরণ করে নেয়। তাদের উৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সাংক্রান-বিষু যে নামেই পরিচিত করি না কেন, এগুলো পাহাড়িদের শত শত বছরের ঐতিহ্য। যা এই দেশের সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
‘বৈ-সা-বি’ উৎসবকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের নানান ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে পাহাড়ে জাতিসত্তাসমূহের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে সরকারি সাধারণ ছুটির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ মানুষের সাথে পাহাড়ে মানুষের সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সম্মিলন ঘটবে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫ সালের ছুটির তালিকায় ‘বৈ-সা-বি’ উৎসব উপলক্ষ্যে দুই দিন ঐচ্ছিক ছুটি রাখা হয়েছে। এই দুই দিনের ছুটিতে সমতলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত পাহাড়িরা নিজ বাড়িতে গিয়ে উৎসব পালন করে ফিরে আসা সম্ভব নয়। ফলে এই ছুটি সাধারণ ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে আরো বাড়াতে হবে। এসময় তারা ‘বৈ-সা-বি’ উৎসবকে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ ৫ দিনের সরকারি ছুটি নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানান তারা।