বাসচালককে রক্তাক্ত করে বিএনপি নেতার হুমকি ‘তোর বাপেগরে জানাইস কে পিটাইছে’
ফতুল্লা (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পিএম
নারায়ণগঞ্জে অনুসারীদের নিয়ে বাস ভাঙচুরের পর চালককে মেরে রক্তাক্ত করেছেন এক বিএনপি নেতা। এ সময় ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন বাসযাত্রী এক সাংবাদিকও। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত মো. ইকবাল হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
মারধরের শিকার ওই বাস চালকের নাম মো. নয়ন। তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে আসিয়ান এসি বাস সার্ভিসের একজন চালক।
বাসচালক ও ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গুলিস্তান থেকে যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় আসিয়ান পরিবহনের একটি বাস। সায়েদাবাদ এলাকায় যানজটে গাড়ির সামনে হঠাৎ একটি মোটরসাইকেল এসে থামলে দ্রুত ব্রেক কষেন চালক। এতে গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ঝাঁকুনি লাগে।
এ নিয়ে ওই বিএনপি নেতা চালককে ধমক দেন। তখন চালক পালটা তর্ক জুড়লে বিএনপি নেতা চালককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে গাড়িটি সানারপাড় এলাকায় এলে আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষমাণ ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক গাড়িটির গতিরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে তারা চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে মারধর করেন।
এসময় লোকজন জড়ো হলে ইকবাল তার একটা ভিজিটিং কার্ড চালককে দিয়ে বলেন, ‘তোর বাপেগরে জানাইস কে পিটাইছে।’ এরপর কর্মী বাহিনী নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন ইকবাল।
ঘটনার বিষয়ে চালক নয়ন বলেন, তারা আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় গাড়ির ভাঙা গ্লাসে আমার মাথা কেটে যায়। পরে ওই যাত্রীর কাছে (বিএনপি নেতা) মাফ চেয়ে আমি নিস্তার পাই। মারধর করে যাওয়ার সময় তিনি তার একটা ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিয়ে গেছেন। বিষয়টা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যেটা বলবে, সেটাই করব।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়নি। চালক বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন। প্রতিবাদ করায় চালক আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। তখন তাকে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে বলেছি।
ঘটনার সময় একজন সাংবাদিককে হেনস্তার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিষয়টির জন্য তিনি ওই যাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
মারধরের শিকার ওই যাত্রীর নাম মিনহাজ আমান। তাকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম)’। বিবৃতিতে মিনহাজ আমানকে একজন ফ্যাক্ট–চেকিং সাংবাদিক উল্লেখ করে বিজেআইএমের আহ্বায়ন স্যাম জাহান ও সদস্যসচিব ফয়সাল মাহমুদ এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মিনহাজ আমান নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল আমাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছে। বাসায় আসতে চাচ্ছে, আমি না করে দিয়েছি। তিনি বলতে চাচ্ছেন, আমার ‘পরিচয়’ দেওয়ার দরকার ছিল। তাকে বলেছি আপনার লোক আপনারই সামনে একজন সাধারণ নাগরিকের গায়ে হাত দিয়েছে যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কোনো পরিচয়ের ইস্যু এটা না এবং দল হিসেবে বিএনপির কী ক্ষতি হচ্ছে সেটাও তার বোঝা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু সেই রক্তাক্ত ড্রাইভারের বা সেই ভাঙা বাস মালিকের কী হবে; সে ব্যাপারে আমার জানা নাই। পুরো বিষয়টা থেকে শিক্ষণীয় হচ্ছে, বেইনসাফি হলে আওয়াজ করুন। নিরব থাইকেন না। আপনি একা না।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।