মুলাদীতে ড্রাম চিমনির ২০ ভাটায় পুড়ছে কাঠ
মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
বরিশালের মুলাদীতে ২০টি ইটভাটায় খনিজ কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়াচ্ছেন মালিকেরা। দুই-তিনটি ইটভাটা নামমাত্র কয়লা রাখলে চুল্লিতে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন কাঠ। সবাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর উৎসবে মেতেছেন।
এতে একদিকে ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অপরদিকে উপজেলার বনভুমির পরিমাণ কমছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় মুলাদী উপজেলায় আড়িয়ালখাঁ, জয়ন্তী ও নয়াভাঙনী নদীর অববাহিকায় বৈধ-অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ২০টি ইটভাটায় দেদারছে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় মালিকেরা কাঠ ব্যবহার করছেন। তবে ইটভাটা মালিকদের দাবি, খনিজ কয়লা কিনতে না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় থেকে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী কালো ধোয়া নির্গত হয় এমন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না এবং কোনো ইটভাটা কাঠ পোড়াতে পারবে না। এছাড়া প্রতিটি ইটভাটা ঝিকঝাক কাঠামোতে স্থাপন করে পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুলাদী উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৭টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। কমপক্ষে পাঁচটিতে কম উচ্চতাসম্পন্ন ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছেন মালিকেরা। বাকিগুলোতে স্থায়ী চিমনি এবং ঝিকঝাক কাঠামো করা হয়েছে। ড্রাম ও স্থায়ী চিমনির ইটভাটায় বেশি কাঠ পোড়ানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি ঝিকঝাক কাঠামোর ইটভাটায়ও কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিটি ইটভাটা কিংবা সংলগ্ন এলাকায় মালিকেরা ‘স'মিল’ বসিয়ে নিয়েছেন। অপেক্ষাকৃত কমদামে কাঠ কিনে স'মিলে চেরাই করে সহজেই ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করেন তারা। কয়লার দাম বেশি এবং কাঠের দাম কম হওয়ায় মালিকেরা কয়লা ব্যবহার করেন না বলে দাবি করেছেন ইটভাটার শ্রমিকেরা। অনেক মালিক নামমাত্র কয়লা এনে ইটভাটায় রাখলেও কাঠ দিয়েই ইট পোড়াচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক বলেন, খনিজ কয়লা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময় পাওয়া গেলেও অনেকটা ব্যয়বহুল ও পরিবহন খরচ বেশি হয়। একটন কাঠের দাম যেখানে ৫-৬ হাজার টাকা সেখানে একটন কয়লার দাম প্রায় ২৪-২৪ হাজার টাকা। তাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অনেকটা সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রায় সবগুলো ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে প্রতিহাজার ইট কমপক্ষে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর কাঠ দিয়ে পোড়ালে প্রতিহাজার ইট ৯০০০ টাকার বিক্রি করা সম্ভব। ক্রেতারা কমদামে ইট পেলে বেশি দামে কিনবেন না। ইটভাটায় কয়লা ব্যবহার করলে মালিকের লোকসান গুনতে হবে। তাই কয়লার পরিবর্তে ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার করাই ভালো।
চরকালেখান ইউনিয়নের দক্ষিণ গাছুয়া গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, গলইভাঙা বাজার এলাকায় ২-৩টি ড্রাম চিমনির ইটভাটা রয়েছে। কম উচ্চতার চিমনির ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোয়ায় ঘর-বাড়ি, বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় একটি এলাকায় কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি প্রয়োজন। মুলাদী উপজেলায় সামাজিক বনায়ন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন মিলিয়ে ৮-৯ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ালে বনভূমি আরও কমে যাবে।
এ ব্যাপারে মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ইটভাটায় স'মিল স্থাপন করা এবং কাঠ পেড়ানো সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন জানান, ইটভাটার আইন অমান্য করে মালিকেরা কাঠ পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্য ঢাকা থেকে বিশেষ একটি টিম নিয়ে মুলাদী উপজেলা অভিযান চালানো হবে।