Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছেলের হাতে মার খেয়ে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ এএম

ছেলের হাতে মার খেয়ে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মা

গত কয়েক মাস ধরে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধ হোসেন মিয়া ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম। ছেলে মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তাদের। তাদের ঘরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা। রাশেদ মিয়া আর তার স্ত্রীর দখলে এখন ওই ঘরবাড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামে এ ঘটনা। 

গত ১৭ অক্টোবর পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িতে ফেরার আবেদন করেন রাশেদের বৃদ্ধা মা আয়েশা বেগম। ওই আবেদনে এলাকার লোকদের নিয়ে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয় ছেলে রাশেদের বিরুদ্ধে। এর আগে ওই ছেলের বিরুদ্ধে আয়েশা বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।

এই মামলায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর জেলে যায় রাশেদ। ওই দিনই রাশেদের স্ত্রীর ভাই পার্শ্ববর্তী ঘাটিয়ারা গ্রামের রায়হান মোল্লা কোড্ডা গ্রামের ফিরোজ মিয়া, নিয়ামত উল্লাহ, দুল্লুক মিয়া, সোহাগ মিয়া, রেজ্জেক মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মনির মিয়া, রহমত আলী, মিরাজ মিয়া, বিশাল, রোকসানা বেগমসহ আরও কয়েকজন বৃদ্ধ আয়েশা বেগম ও তার স্বামী হোসেন মিয়াকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর তালা দিয়ে দেয় ঘরে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে বৃদ্ধ হোসেন মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকছেন। বাড়িতে ফিরলে তাদের প্রাণে মারার আশঙ্কা করছেন। 

ছেলে রাশেদ মিয়া (৪৮) ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম (৩৮) এর বিরুদ্ধে গত ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মা আয়েশা বেগম বাদী হয়ে যে মামলা করেন তাতে অভিযোগ করা হয়, তার ৪ পুত্রের মধ্যে রাশেদ ছাড়া বাকি ৩ জন বিদেশে থাকে। রাশেদ স্ত্রীর কুপরামর্শে তার সম্পত্তির হিস্যা বাবার কাছ থেকে লিখে নেয়। সেই সম্পত্তি নেশা করে ও জুয়া খেলে নষ্ট করে ফেলে। এরপর টাকার জন্যে তাদের অত্যাচার নির্যাতন করতে থাকে। তার অন্য ছেলেদের বিদেশ থেকে পাঠানো ২ লাখ টাকা নেওয়ার জন্যে তাদের মারধোর করে।

গত ৫ ডিসেম্বর কোড্ডা গ্রামে গিয়ে হোসেন মিয়ার বসত ঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। বাড়িতে রাশেদের স্ত্রী রোকসানা রয়েছে। এ ঘটনায় সেখানকার মাতবররা রাশেদের পক্ষ নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

হোসেন মিয়ার ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় রাশেদ। পৈত্রিক সম্পত্তিতে তার হিস্যা তিনি আগেই পিতার কাছ থেকে লিখে নেয়। এরপর পাশের ঘাটিয়ারায় শ্বশুরবাড়িতে ঘর উঠিয়ে বসবাস করতে থাকে। পরে আবার নিজের বাড়িতে ফিরে এসে ঘর উঠিয়ে থাকতে থাকে। এর মধ্যে হোসেন মিয়া তার স্ত্রী এবং বাকী ৫ সন্তানের নামে সম্পদ লিখে দিলে রাশেদ পিতার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। 

রাশেদের ছোট ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী এরশাদ মিয়া জানান, তারা ৪ ভাই, ২ বোন। তার পিতার নামে থাকা জমিজমার মধ্যে ৪১ শতাংশ জায়গা ২০০৮ সালে তার বড় ভাই রাশেদ মিয়ার নামে লিখে দেন তার পিতা। বাকী ৬১ শতাংশ ৭৫ পয়েন্ট তার মা ও ৫ ভাইবোনের নামে লিখে দিয়েছেন। এর মধ্যে বাড়ির জায়গাও রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে ৫ মাস আগে দেশে আসেন এরশাদ। এর মধ্যে ৩ মাস ধরে বাড়িতে উঠতে পারছেন না বলে জানান।

আয়েশা বেগম জানান, আমার বড় ছেলে রাশেদ, ভাতিজা ফিরোজ, ফিরোজের ছেলে নিয়ামতুল, ওবায়দুল, সোহাগ, মনির, সাচ্চু-সবাই মিলে আমাকে মারধোর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এরপর থেকে ৩ মাস ধরে বাড়িতে ঢুকতে পারছি না।

হোসেন মিয়া জানান, তার সম্পত্তির ৩ ভাগের মধ্যে ২ ভাগই রাশেদকে লিখে দিয়েছেন। সম্পদ পেতে সে অত্যাচার করত। তখন তাকে একটি ঘরও দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে সে যে স্বর্ণালংকার এনেছিল তাও নিয়ে গেছে। এরপর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘর উঠিয়ে বসবাস করতে থাকে। এখন আবার বাড়িতে ফিরে এসে বাড়ির ভাগ চায়। বাদবাকি সম্পত্তি আমি আমার স্ত্রী, বাকি ৫ সন্তানের নামে লিখে দেই। ভাগে ১০-১১ শতক করে পেয়েছে তারা। এজন্যে সে আমাকে, আমার  ছেলেরে মারছে। আমার পাঁজরের হাড্ডি ভাইঙ্গা লাইছে। কোনো রকমে হাঁটতে পারছি। ঘুসি দিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলছে।

তবে রাশেদের স্ত্রী রোকসানা বেগমের দাবি সব সম্পদ তার স্বামীর। তবে দলিল বাপ-মার নামে। চুরি করে অন্য ছেলেদের নামে দলিল করে দিয়েছে। রোকসানা তার ঘরবাড়ি কুপানোর এবং ছেলেমেয়েদের মারধোর করার উল্টো অভিযোগ করেন।

মাঞ্জু খলিফা বলেন, বাপে ছেলেকে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনে বাড়িতে থাকতে দেন। বাকি ৩ ছেলের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেওয়া,পরে বাবার ছেলের জেলে যাওয়া নিয়ে মারামারি। পুলিশ তাদের বাড়িতে দিয়ে গেছে। ঘরের তালা খুলে দিয়ে বলেছে আপনারা থাকেন। আপনাদের সঙ্গে অন্য কেউ মারামারি করলে আমাদের জানাবেন। নিরাপত্তার সমস্যা নেই। তবে কেন তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না, তা বলতে পারব না।

কোড্ডা গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সর্দাররা কয়েকবার মিটিং করেও কোনো সমাধান দিতে পারেনি। মা-বাপকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এর থেকে অন্যায় আর কি আছে।

সদর মডেল থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, আমার জানামতে এমন ঘটনা দুটো আছে। বাসায় উঠিয়ে দিয়ে আসার পর পরবর্তী কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তা আমাদেরকে জানতে হবে। জানানো হলে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম