Logo
Logo
×

সারাদেশ

অভিনব কায়দায় সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাপুড়েরা

Icon

মতিউর রহমান ভান্ডারী, সাভার

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম

অভিনব কায়দায় সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাপুড়েরা

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে সাপের বাক্সে কয়েক হাত ঘুরে সাভার বেদেপল্লিতে আসছে ইয়াবার চালান। আর হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদক আসছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সীমান্ত থেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে অভিনব কায়দায় কতিপয় সাপুড়ে মাদকের চালান এনে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লার দুটি বেদেপল্লি ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত সাভার বেদেপল্লির ৯ প্রভাবশালী সাপুড়ে। যারা প্রত্যেকেই কয়েক কোটি টাকার মালিক। তাদের নিয়ে ২ ডিসেম্বর যুগান্তরে ‘বেদেপল্লির ৯ সাপুড়ের হাতে মাদকের চেরাগ’ শিরোনামে আরেকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

জানা যায়, টেকনাফ থেকে মাদক বহন করতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে দুইজন করে ১৮ থেকে ২০টি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ টেকনাফ থেকে সাপের বাক্সে ইয়াবা নিয়ে কক্সবাজারের গ্রুপের হাতে তুলে দেয়। তারা চট্টগ্রামের অন্য গ্রুপের হাতে পৌঁছায়। একই কায়দায় ফেনী হয়ে কুমিল্লার চান্দিনা থানার ‘হারিখোলা বেদেপল্লি’ অথবা ইলিয়েটগঞ্জের ‘বীরতলা বেদেপল্লি’তে যায় মাদকের চালান। এই দুটি বেদেপল্লি ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার হয়। চার বছর ধরে এভাবে মাদক বহনের অভিজ্ঞতার কথা যুগান্তরকে জানিয়েছেন বেদে সম্প্রদায়ের জব্বার আলী (ছদ্মনাম)।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, কুমিল্লার বেদেপল্লি থেকে সুযোগ বুঝে নৌপথে মুন্সীগঞ্জে পাড়ি জমাতাম। এরপর কেরানীগঞ্জ হয়ে সাভার বেদেপল্লিতে আসতাম। বিভিন্ন কারণে আমরা অনেক সময় পথ পালটে কুমিল্লা থেকে স্থলপথ ধরেও আসতাম। টেকনাফ থেকে একটি ইয়াবার চালান সাভারে এনে দিলে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণে আমি মাদক বহন ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় এসেছি। পরে তারা (মাদক ব্যবসায়ীরা) আরও বেশি টাকা অফার করেছিল। কিন্তু আমি যাইনি।

এ চক্র একই কায়দায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত থেকে পণ্যবাহী ট্রাকে নিয়ে আসে গাঁজা। এছাড়া লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে আনে ফেনসিডিল, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদক। কখনো তারা (বেদেরা) লোকাল বাস ও প্রাইভেট কারেও এসব মাদক বহন করে।

জব্বার আলীর মাদক বহনের অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে দেড় বছর ধরে অনুসন্ধান করে যুগান্তর। তথ্য সংগ্রহ করতে মাদকের ক্রেতা সেজে বিক্রেতাদের দলে ভিড়তে হয়েছিল প্রতিবেদককে। এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে সাধু বেশধারী মাদকের ডিলারদের নাম। এর সঙ্গে জড়িত সাভার পৌর মহল্লার অমরপুর এলাকার মৃত মকবুল মিয়ার ছেলে রুস্তম, একই এলাকার মোবারক হোসেনের (ঢেকুর) ছেলে আরিফ, মৃত রহিমের ছেলে রাশেদ, মৃত টান্নু মিয়ার ছেলে বুলবুল, পোড়াবাড়ি এলাকার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে শাকিল মিয়া, কাঞ্চনপুর (বেদেপল্লি) এলাকার মৃত ফৈজুদ্দিনের মেয়ে ফরিদা, একই এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া, মৃত শাজিদ আলির ছেলে লস্কর আলী ও বাড্ডা মহল্লার সলেমানের ছেলে আফাছার।

তবে মাদকের এসব ডিলার অভিযোগ অস্বীকার করে একই রকম তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবনযাপন করি। আমাদের বিরুদ্ধে যে মাদক কারবারের অভিযোগ এসেছে, তা আদৌও সত্য নয়। তাদের মতে, মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত আছে সাভার বেদেপল্লির অন্যকিছু লোক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ থেকে মাদক বহনকারী বেদেরা সাভারের বেদেপল্লির ৯ প্রভাবশালী সাপুড়ের আত্মীয়স্বজন। এর বাইরেও কয়েকটি গ্রুপ মাদক কারবারে জড়িত। প্রতিদিন তারা অন্তত কোটি টাকার মাদক বিক্রি করছে। স্থানীয়রা জানান, নেশার জগতে যা আছে, সবই মেলে সাভারের বেদেপল্লিতে। দিবারাত্রি চলে বিকিকিনি।

সাভার বেদেপল্লিতে মাদক বিক্রি করছেন অমরপুর এলাকার মৃত রফেশ উদ্দিনের ছেলে ইউসুফ মিয়া, মন্তাজ আলীর ছেলে ইমামুল মিয়া, কাঞ্চনপুর এলাকার মৃত ভীর আলীর ছেলে বাচ্চু মিয়া, একই এলাকার নায়াব আলীর ছেলে ফজলু মিয়া, পোড়াবাড়ি এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলির ছেলে খোকন মিয়া, একই এলাকার মৃত তারেক আলির ছেলে বাকিউর মিয়া, পোড়াবাড়ি এলাকার উজ্জ্বল মিয়া, মৃত আক্কাসের ছেলে আজগর ও মতিউর মিয়া, নজরুল ইসলাম, তাহের আলী, সৈনুদ্দিন মন্ডল, মোবারক মিয়া, রাকিব, আলিফ মিয়া, শাহিন, জসিম, সাদ্দামসহ আরও অনেকে। এখানকার বেশির ভাগ খুচরা ক্রেতা আসে ঢাকার ধামরাই, মানিকগঞ্জ সদর ও সিংগাইর থেকে। বংশী নদীর পূর্বপাশ ঘেঁষে সাভারের বেদেপল্লি। নদীর পশ্চিম পাশে ধামরাই ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর। নদীপথ পাড়ি দিয়ে ক্রেতারা গ্রামীণ পথ ধরে ধামরাই ও মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় মাদক নিয়ে নিরাপদে পৌঁছে যায়। এছাড়াও পাইকারি দরে মাদক নিতে অসে আশুলিয়া, সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর ও রাজধানীর কারবারিরা।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ যুগান্তরকে বলেন, সাভারের বেদেপল্লিতে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুসন্ধানী তথ্যের সঙ্গে আমাদের (পুলিশের সংগৃহীত) তথ্যের মিল রয়েছে। আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করে অচিরেই বেদেপল্লিতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম