কৃষকের ৪৫ টাকা কেজির কাঁচামরিচ বাজারে ৮০ টাকা

বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পিএম

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কৃষকরা কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করলেও ভোক্তারা বাজার থেকে কিনছেন ৮০ টাকা দরে। কৃষকরা মরিচের ন্যায্যমূল্য পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করা হবে।
খোঁজ নিয়ে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মৌসুমে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে হাইব্রিড জাতের উচ্চ ফলনশীল মরিচের চাষাবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষক মরিচ জমি থেকে তুলে বাজারজাত করতে শুরু করেছেন। আর এ কারণেই বাজারে কাঁচামরিচের ঝাল কমতে শুরু করেছে। তবে বরাবরের মতো কৃষকরা মরিচের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর চরাঞ্চলের মরিচের ওপর নির্ভর করে উপজেলার যমুনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় আড়ত গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাচারি, হাসনাপাড়া, পারতিতপরল, কালিতলা নৌঘাট, মথুরাপাড়া ও রৌহাদহ অন্যতম। প্রতিদিন এসব আড়তে কয়েক হাজার মণ কাঁচামরিচের আমদানি হয়।
কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে সোমবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলায় ১৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে কৃষকেরা প্রতি কেজি মরিচের মূল্য পেয়েছেন ৪৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫৬ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মরিচ উত্তোলন ও আড়ত পর্যন্ত নিয়ে আসতে পরিবহণ খরচ বাবদ কৃষকদের কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তাই প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করে কৃষকদের ৩০ টাকা করে ঘরে উঠছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি মরিচ ৩৫ টাকা বেশি বিক্রি করেছেন। এতে একদিকে কৃষকরা তাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; অপরদিকে সাধারণ ক্রেতারাও সঠিক মূল্যে কাঁচামরিচ কিনতে পারছেন না।
উপজেলার হাট শেরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া চরের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের চরে তিনি তিন বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। বেশ কয়েকবার গাছ থেকে মরিচ উত্তোলন করে বাজারজাত করেছেন। প্রথমে তিনি ৪৫০০ টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রি করেছেন; কিন্তু সোমবার তিনি ১৮০০ টাকা মণ দরে কাঁচামরিচ বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, অসময়ের অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর মরিচ চাষ করতে খরচ বেশি হয়েছে; কিন্তু বাজারে দিন দিন মরিচের দাম শুধু কমছে। এভাবে দাম কমতে থাকলে আমাদের মরিচ চাষে লোকসান গুনতে হবে। এছাড়া খুচরা বাজারে যে দামে মরিচ বিক্রি হচ্ছে, তার অর্ধেক দাম আমরা পাচ্ছি। বাজারের ন্যায্যমূল্য আমরা পাচ্ছি না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন বিষয়টি বিবেচনায় এনে আমাদের মরিচের ন্যায্যমূল্য দেওয়া হোক।
সারিয়াকান্দির পাইকারি কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন উপজেলার হাসনাপাড়া আড়ত থেকে ৪০ মণ করে কাঁচামরিচ ক্রয় করছি। মরিচগুলো দুই থেকে এক টাকা লাভে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছি। তবে বাজারে মরিচের দাম কিভাবে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। সোমবার বিকালে হাসনাপাড়া আড়তে কাঁচামরিচ প্রতি মণ ১৮০০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
সারিয়াকান্দি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন বলেন, ক্রয়মূল্যের চেয়ে সামান্য কিছু লাভে ৮০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করছি। কাঁচামাল একটু এদিক সেদিক করে বিক্রি না করলে একেবারেই কিছু থাকবে না।
মরিচ ক্রেতা সুজিত সাগর বলেন, সোমবার সকালে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ২০ টাকায় কিনেছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বগুড়া জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতা হক বলেন, বাজার মনিটরিং করতে জেলা সদর নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খাচ্ছি। উপজেলা সদরে বেশি একটা যাওয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই যাওয়া হয়। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা আমাদের দেখে এক রকম বিক্রি করেন, আবার আমরা চলে আসলে ভিন্নদামে বিক্রি করেন। তাছাড়া বারবার হাত বদলের ফলেও পণ্যের দাম বাড়ছে। কৃষকদের সঠিক দাম ফিরিয়ে দিতে শিগগিরই সারিয়াকান্দিতে বাজার মনিটরিং করা হবে।