নড়াইলে খুলছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার
মো. শাহীদুল ইসলাম শাহী, নড়াইল
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হচ্ছে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন হয়ে নড়াইলের ওপর দিয়ে খুলনা পর্যন্ত নবনির্মিত রেলপথ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে নড়াইল জেলা। এর আগে এ রুটে ৩ দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করে। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর ১২টি বগি নিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর কমলাপুর থেকে নড়াইল হয়ে খুলনায় যায় ট্রেনটি। এখন শুধু অপেক্ষা উদ্বোধনের। নড়াইলের ওপর দিয়ে রেলপথে ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে খুলছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। এক সময় নড়াইলবাসীর কাছে যা ছিল স্বপ্ন, তা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
এতে
শুধু বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের নড়াইলের
শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা আর পর্যটন শিল্পেরই
বিকাশ নয়, শিল্পকারখানা স্থাপনেও
রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ ট্রেন চালুর
মাধ্যমে জেলা শহর থেকে
মাত্র ২ ঘণ্টায় যাতায়াত
করা যাবে ঢাকায়। ট্রেনে
স্বল্প সময়ে যাতায়াত করার
পাশাপাশি এতে কৃষিপণ্য পরিবহণের
মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পরিবর্তনের আশা
নড়াইলবাসীর। জানা যায়, নিয়মিতভাবে
১২টি বগি নিয়ে ঢাকার
কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু
হয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, নড়াইল, যশোরের সিঙ্গিয়া জংশন হয়ে খুলনা
পৌঁছাবে ট্রেন। ঢাকা থেকে যশোর
পর্যন্ত ১৬২ কিলোমিটার রেলপথ
নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৯
হাজার ৮০ কোটি টাকা।
নড়াইলের
ওপর দিয়ে এখন নিয়মিত
ঢাকা-খুলনা ট্রেন চলাচল করবে। এতে ঢাকা-ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনার
দূরত্ব হবে মাত্র ১৭২
কিলোমিটার। খরচ ও সময়
দুটিই সাশ্রয় হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী,
চিত্রা এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস
খুলনা থেকে পদ্মা সেতু
হয়ে প্রতিদিন চার জোড়া ট্রেন
চলাচল করবে ঢাকায়। প্রতিদিন
ভোর ৬টা, দুপুর সাড়ে
১২টা, দুপুর আড়াইটা ও সন্ধ্যা সাড়ে
৭টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যশোর,
নড়াইল, ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু
দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। নতুন ট্রেনে ১২টি
যাত্রীবাহী বগি থাকছে। এর
মধ্যে এসি চেয়ার ও
এসি স্লিপার বগিও রয়েছে। প্রস্তাবে
সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা
হয়েছে ৫৫০ টাকা।
নড়াইলবাসী
বলছেন, ঢাকা থেকে রেলপথে
নড়াইলের ওপর দিয়ে রেল
চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের
অপেক্ষায় জেলাবাসী। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হওয়ার পর
থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা
বইছে। নড়াইলে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গড়ে
ওঠেনি কোনো ধরনের শিল্পকারখানা।
তবে শিল্প বিকাশে এবার সম্ভাবনার আলো
দেখাচ্ছে নড়াইলের এ রেলপথ। এর
মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে
অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা।
নড়াইল
স্টেশন মাস্টার উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, নড়াইলবাসী প্রথম রেলসেবা পেতে যাচ্ছে। এতে
যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন নতুন সম্ভাবনার
দ্বার খুলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে
আমাদের সব কার্যক্রম যেমন-সিগন্যালিং, অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন করে
পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
নড়াইলের
জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সব কর্মকাণ্ড শেষ
করে নড়াইলে রেলওয়ে স্টেশন এখন প্রস্তুত ঐতিহাসিক
রেলযাত্রার জন্য। এ ট্রেনে স্বল্প
সময়ে ঢাকা থেকে নড়াইল
হয়ে খুলনা দিয়ে মোংলা যাতায়াত
করা যাবে।
স্থানীয়
লোকজন মনে করেন, নড়াইলে
ট্রেন আসবে, এটা মানুষের কল্পনাতেও
ছিল না। সেই কল্পনা
ও স্বপ্ন দুটোই এখন বাস্তব।