হাট ভবন নির্মাণে লোহার পরিবর্তে বাঁশ!
বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সমেশপুর হাটে দোতলা একটি ভবন নির্মাণে লোহার পাইপের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর সেরাজুল ইসলাম সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মানতে রাজি নন।
এদিকে নিম্নমান ও নিয়ম না মেনে কাজ করার জন্য প্রকৌশল অফিস থেকে ২ দফা চিঠি দিলেও তার তোয়াক্কা না করে প্রভাব দেখিয়ে কাজ করে চলছে। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হাটের সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাসহ এলাকাবাসী।
তবে নিয়ম না মেনে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) অফিস সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সারা দেশব্যাপী হাট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আওতায় বেলকুচি উপজেলার সমেশপুর বাজারে দুইতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ চলছে।
২০২৩ সালের মে মাসে মেসার্স লিটন এণ্টারপ্রাইজ চুক্তিবদ্ধ হয়। এতে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বিভিন্ন প্রকারের ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকার স্টিল সাটার ও লোহার পাইপের ব্যবহার ধরা থাকলেও ঠিকাদার ইচ্ছামতো বাঁশের ব্যবহার করে যাচ্ছেন। কাজটি ২০২৪ সালের গত এপ্রিল মাসে শেষ করার কথা থাকলেও আজ অবধি কাজ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বলে জানায় স্থানীয় প্রকৌশল অফিস।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও মীর সেরাজুল দলীয় প্রভাবে এখনো জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে যেনতেন কাজ করে শেষ করতে চাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি, ভবনটি যেন সঠিকভাবে করা হয়।
বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, গত মাসে ডিজাইন মোতাবেক ও মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহারের জন্য দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই কাজের ক্ষেত্রে স্টিল ও লোহার পাইপ দিয়ে ছাদ ঢালাইয়ের উল্লেখ আছে। কিন্তু ঠিকাদার এখন পর্যন্ত বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঢালাইয়ের জন্য ফ্রেম করেছে। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঢালাই দিলে এ ধরনের বড় মানের ভবনের জন্য ক্ষতিসাধন করতে পারে। এভাবে নির্মাণ হলে ভবনের স্থায়িত্বকাল কমিয়ে দেয়। আমাদের এ কাজে প্রায় ১৫ লাখ টাকার স্টিল সাঁটার ধরা আছে।
উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা মীর সেরাজুল ইসলাম বলেন, বাঁশ সাঁটারে ব্যবহার করলে কী সমস্যা, স্টিল সাঁটার ব্যবহার করব কিনা সেটা আমার ব্যাপার। ভবন ভেঙে গেলে ক্ষতিপূরণ আমাকে দিতে হবে তাতে অন্যের সমস্যা কী। এছাড়া এ বিষয়ে অফিস সব জানে ও সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কাজে ধীরগতি কেন? এ বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ভবনের সাটারিংয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আছে, সেহেতু কোনোভাবেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাটারিং দেওয়া যাবে না। ঠিকাদারকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে সাত দিনের মধ্যে বাস ও কাঠের সাটারিং খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে।