টাকার জন্যই দুই বন্ধু মিলে ব্যবসায়ীকে হত্যা
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
জমানো ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর এলাকার নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন ফকিরকে (৬৫) দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর লাশ গুম করতে বস্তায় ভরে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়।
ঘাতক দুই বন্ধু হলেন- নলুয়া গ্রামের আজিজ মন্ডলের ছেলে রাজমিস্ত্রী মামুন (২৮) ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রানু শেখের ছেলে ভবঘুরে জয়নাল শেখ (৫০)।
শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার করা আসামিরা রইচকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে শাহজাদপুর থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী, এসআই শারফুল ইসলাম ও এসআই কাঞ্চন কুমার প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি মো. কামরুজ্জামান জানান, গত বুধবার (২০ নভেম্বর) দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু, নিহতের লুণ্ঠিত ২টি মোবাইল ফোন, পরনের ট্রাউজার ও লুঙ্গি উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি জানান, নিহত রইচ উদ্দিন নলুয়া বটতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ১ম স্ত্রী মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রায় ৮-৯ বছর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি।
তিনি নিজ গ্রামের একটি ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন এবং নিজেই রান্না করে খেতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল ৬টার দিকে এসে দোকান খুলতেন ও রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতেন। সারাদিন যে টাকা বেচাকেনা হতো তা বাড়িতে বিছানার নিচে রেখে দিতেন।
নলুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভবঘুরে জয়নাল শেখ নিয়মিত তার দোকানে আসতেন ও সদাইপাতি কিনতেন। এছাড়া নিয়মিত তারা তার দোকানে বসে আড্ডা দিতেন। ফলে মামুন ও জয়নাল শেখের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ফলে তারা ব্যবসায়ী রইচের পূর্ব পরিচিত।
মামুন ও জয়নালের হাতে টাকা পয়সা না থাকায় তারা ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের জমানো টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকলাপনা অনুযায়ী, মামুন শাহজাদপুর বাজার থেকে একটি চাকু কিনে আনেন। এরপর তারা গত ৩ নভেম্বর রাত ১০টা থেকে ব্যবসায়ী রইচকে অনুসরণ করতে শুরু করেন। তিনি বাড়ি যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসামি মামুন এবং জয়নাল রইচের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে রইচকে ঘর থেকে ডেকে বের করেন। রইচ বাইরে বের হলে আসামি জয়নাল রইচকে পেছন থেকে চেপে ধরেন। এ সময় রইচ মাটিতে পড়ে গেলে আসামি মামুন রইচকে গলা কেটে হত্যা করেন।
এরপর রইচের ঘরের তোষকের নিচে থাকা ১৬ হাজার টাকা আসামি মামুন নিয়ে নেন। রইচের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও রক্ত গামলায় করে টয়লেটে ফেলে দেন। মামুনের রক্তমাখা লুঙ্গি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু বাড়ির পাশে ডোবায় ফেলে দেন। মামুন রইচের লাশ একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে আসামি জয়নালের সহায়তায় পাশের শফিকুলের ডোবায় ফেলে দেন। এ সময় মামুন নিজে ১০ হাজার টাকা নেন এবং জয়নালকে ৬ হাজার টাকা দেন। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন।
এদিকে পরদিন সকাল থেকে রইচের খোঁজ না পাওয়ায় এবং তার মোবাইল বন্ধ থাকায় তার আত্মীয় স্বজনেরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে গত ৮ নভেম্বর তার ছেলে দুলাল হোসেন শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন।
পুলিশ গত ১৮ নভেম্বর বিকালে নলুয়া বটতলার শফিকুল ইসলামের ডোবা হতে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে। ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিনের ভাই আব্দুল মজিদ লাশের পড়নের চেক লুঙ্গি ও বাম হাতের ছয় আঙ্গুল দেখে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত রইচ উদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল গত ২০ নভেম্বর এ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নলুয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে মামুন ও যুগ্নীদহ পশ্চিমপাড়া থেকে জয়নাল শেখকে গ্রেফতার করে।
তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী টয়লেট থেকে নিহত রইচের দুটি মোবাইল ফোন, আসামি মামুনের বাড়ি থেকে রইচের একটি ট্রাউজার এবং রইচের বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করে পুলিশ।