আ.লীগ নেতার দুর্নীতি: নির্মাণ শেষ না হতেই মুজিব কিল্লায় ফাটল
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের চর নাজিম উদ্দিনে নির্মাণকাজ শেষ না হতেই মুজিব কিল্লার ভবনে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এতে নির্মাণকাজ নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের চর নাজিম উদ্দিন বা পূর্ব ঢালচরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে অধীনে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মুজিব কিল্লার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এটির টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়। ওই সময় মুজিব কিল্লাটির টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পায় মেসার্স উপকূল কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজটি কিনে ঠিকাদার হিসেবে কাজটি শুরু করেন ঢালচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা সাবেক সভাপতি মো. আবুল কালাম।
পূর্ব ঢালচরের চরনাজিম উদ্দিনের বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন ও মো. মোজাহিদ জানান, দুর্যোগের সময় মানুষ ও গবাদি পশুর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তাদের চরে এই মুজিব কিল্লাটি স্থাপনের কাজ শুরু হলে তারা খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীর গতিতে কাজ শুরু করেন।
ওই চরের বাসিন্দা মো. সেলিম পাটওয়ারী ও মো. ফারুক জানান, মুজিব কিল্লাটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৩/৪টি পয়েন্টে বড় বড় ফাটলের দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় যদি এটি হস্তান্তর করে তাহলে এখানে মানুষ ও গবাদি পশুর ঝড়ের সময় আশ্রয় নিলে নিরাপত্তাহীন থাকবে।
মো. জসিম উদ্দিন, মো. আক্তার মাঝি ও মো. ইব্রাহীম জানান, ঠিকাদার আবুল কালাম কিল্লাটির পাকা ভবন নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। যার কারণে এটির বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। মূল ভবনের কাজ প্রায় শেষ হলেও এখনও বাকি রয়েছে চারপাশের দেয়ালসহ কয়েকটি কাজ। এছাড়াও ফ্লোর ঢালাইতে রড ও ইট না দিয়ে শেষ করেছেন কাজ। ১৪ ফুট সট পিলারের মাঝখানে টাইবিম দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি সেটিও। এমনকি সেফটিক ট্যাংকিতে ১০ ইঞ্চি গাঁথুনী করার কথা থাকলেও সেখানে নিম্নমানের লোকাল ইট দিয়ে ৫ ইঞ্চি গাঁথুনী করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, এটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ঝড়ের সময় কেউ যদি আশ্রয় নেন তাহলে তারা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এজন্য তারা ঠিকাদারের দুর্নীতি তদন্ত করে নতুন করে শক্ত কিল্লা নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ করেন।
তবে অভিযুক্ত সাব ঠিকাদার ও ঢালচর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আবুল কালাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ফাটলের বিষয়টি সাধারণ বিষয়। মাটির কারণে ফাটল ধরেছে। ফাটলের স্থানে বালি ও সিমেন্ট দিয়ে আটকে দ্রুত ভবনটি হস্তান্তর করার পরিকল্পনা কথা জানান তিনি।
তবে ভোলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাতেম আলী জানান, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অনিয়মের অভিযোগ ও প্রমাণ পেয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মুজিব কিল্লাটি পরিদর্শনের আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে যাওয়ার কথা বলেন।
তিনি আরও জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে অধীনে ভোলায় ৩৭টি মুজিব কিল্লা স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ১৪টির, বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে ৪টি।