আলফাডাঙ্গায় চার প্রকল্পের ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইয়াছমিন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পাণ্ডের বিরুদ্ধে চার প্রকল্পের ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার প্রকল্প থেকে এ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে একই অর্থবছরের আরও দুটি প্রকল্পের দেড় লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও শারমিন ইয়াছমিন যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসককে দিয়ে উদ্বোধন করানো হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অবগত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মনজুর হোসেনের অফিসিয়াল প্যাডে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের টিআরের বিশেষ বরাদ্দের মুজিব শতবর্ষ পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা পরিষদের মধ্যে সৌন্দর্য বর্ধনের ২ লাখ টাকা, মুজিব শতবর্ষ পার্কের জন্য রাইড ক্রয়ের জন্য আড়াই লাখ টাকা এবং উপজেলা পরিষদের ভেতরে আগেই স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সৌন্দর্য বর্ধন বাবদ ২ লাখ টাকা গত ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রকল্পগুলো অনুমোদন করেন।
বিধি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও নামমাত্র জনপ্রতিনিধিদের নাম ব্যবহার করে কথিত একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পাণ্ডে এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাউকে না জানিয়ে ওই টাকা তুলে নিজেদের কাছে রেখে দেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউএনও। অনুমোদিত প্রকল্প এলাকায় কোনো কাজ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবুল বাশার শেখ বলেন, এ প্রকল্পের কোথায় কী কাজ করেছে আমি জানি না। আমি কোনো টাকা তুলিনি।
অন্য দুটি প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল ওহাব পান্নু বলেন, দুটি কাজের পিআইসি আমাকে করা হয়েছিল বলে আমি জানতে পারি, কিন্তু আমি কোনো টাকা তুলিনি। পরে পিআইও এবং ইউএনও আমাকে একটি স্বাক্ষর দিতে বললে তারা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় আমি তাদের কথায় একটি স্বাক্ষর করি। বিষয়টি নিয়ে সাবেক ইউএনও রফিকুল স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে জানান- ওই প্রকল্পের সব টাকা বর্তমান ইউএনও শারমিন ইয়াছমিনের কাছে।
ঘটনার সত্যতা জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এক কর্মকর্তা বলেন, নগদ টাকা বর্তমানে ইউএনও শারমিন ইয়াছমিনের কাছে আছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রফিকুল হক বদলি হয়ে গেলে নির্বাচনের সময় জ্যোতিশ্বর পাল নামে একজন ইউএনও যোগদান করেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তিনি বদলি হলে তার স্থলে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন শারমিন ইয়াছমিন। তিনি কোনো কাজ না করেই বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। গত ১৩ নভেম্বর তার বদলি আদেশ হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে।
এ বিষয়ে ইউএনও শারমিন ইয়াছমিন যুগান্তরকে বলেন, গত সংসদ নির্বাচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জুলাই-আগস্টের সরকার পতনসহ নানা সমস্যার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এরই মাঝে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া পার্কের রাইড কেনার জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে দিয়ে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমার চলে যাওয়ার সময় তারা আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।
গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন টিআর, কাবিখা, কাবিটার বাস্তবায়ন বিধিমালা অনুযায়ী পিআইসি কমিটি প্রকল্পের অর্থ তুলে কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইসি কমিটিকে কারিগরি সহায়তা ও তদারকি করবেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যৌথ স্বাক্ষরে প্রকল্পের কাজটি সমাপ্তি সাপেক্ষে কাজের বিল দেওয়ার কথা থাকলেও তারা নিজেরা গত দুই অর্থবছর আগের প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করেন।