নবাবগঞ্জে ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই, যানজটে দুর্ভোগ
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ এএম
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর চৌরঙ্গির যানজটে নাকাল পথচারিরা। এ সড়কে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় যানজটে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ও চলাচলকারীরা।
একই অবস্থায় বাগমারা ব্রিজের ঢাল থেকে শুরগঞ্জ পর্যন্ত ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এবং উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বান্দুরা ব্রিজের। মানুষের যাতায়াত সহজ করতে দেড় যুগ আগে ইছামতী নদীর বান্দুরায় ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রতীক্ষার সেই ব্রিজটি মানুষকে আরও ভোগান্তিতে ফেলেছে। সরু সেতুতে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।
সরজমিনে কয়েকদিন ঢাকা-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের চৌরঙ্গী, বাগমারা ও শুরগঞ্জের অবস্থান করে দেখা যায় দিনভর যানজট লেগেই থাকে সেখানে।
অটোরিকসা চালকদের যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারনেই মূলত যানজট সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন স্থানীয় ও পথচারিরা। যানজট নিরসনে কদিন সেখানে ট্রাফিক কাজ করায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল পথচারিদের। এখন ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় আবারো যানজটের হচ্ছে। ব্যস্ত এ সড়কে যানজট থাকায় ঢাকাগামী মানুষের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কর্মজীবিদের।
স্থানীয় দোকানদাররা জানান, নবাবগঞ্জের অন্যতম সমস্যা এ যানজট। ট্রাফিক পুলিশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করায় যানজট কিছুটা কমেছিল। তাছাড়া ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করার সময়ও অনেক ফাঁকা থাকতো চৌরঙ্গি। কিন্তু এখন আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। অটোগাড়ি চালকরা সড়কে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং করায় যানজট বেশি সৃষ্টি হয়।
অটোরিকসা চালক আমির হোসেন বলেন, নবাবগঞ্জে সদর থেকে বাগমারা হয়ে শুরগঞ্জ পর্যন্ত গাড়ি পাকিং করার নির্দিষ্ট জায়গা নাই। তাই আমরা সড়কের উপরই গাড়িগুলো রেখে দেই। এতে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, কি করবো ভাই, দূরে গাড়ি রাখলে যাত্রী পাওয়া যায় না। গাড়িচালকদের সচেতন হতে হবে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক শান্ত ইসলাম বলেন, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর বা বান্দুরা থেকে কোনো রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা ঢাকা নিতে গেলে বান্দুরা ব্রিজ ও সদর চৌরঙ্গিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমরা এক ঘণ্টায় ঢাকা চলে যেতে পারি, কিন্তু দেখা যায় অনেক সময় এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।
একই অবস্থা উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বান্দুরা ব্রিজের। সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজটি তুলনামূলকভাবে অনেক সরু। ব্রিজের এপার-ওপার গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফলে হেঁটেও মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত যাতায়াতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে পথচারিদের। বিশেষ করে সকালের ও দুপুরে যানজটে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের হয়রানি হতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, বান্দুরা, নয়নশ্রী, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ জেলার লক্ষাধিক মানুষ সেতুটির ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসাসহ নানা গৃহস্থালি কাজে নবাবগঞ্জ থেকে মানিকগঞ্জে, আবার মানিকগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জে মানুষকে নিয়মিত যাওয়া-আসা করতে হয়। এ জন্য এই বান্দুরা ব্রিজটি ব্যবহার করতে হয়।
বান্দুরা এলাকার ইজিবাইক চালক রাজিব হোসেন বলেন, বান্দুরার ব্রিজে একটা ট্রাক বা বাস আসলে আমাদের আর ইজিবাইক নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা থাকে না। প্রতিদিনই আমরা যাত্রী নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকি।
কলেজ শিক্ষার্থী ইফসিতা ইমরান বলেন, খুব ভয় লাগে ব্রিজটি পাড় হতে। যখন যানজট লেগে যায়, তখন পায়ে হেঁটেও ব্রিজ পাড় হওয়া যায় না। যদি এখানে একটি ট্রাফিক ব্যবস্থা করা হয়, তবেই আমরা এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতাম।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর পিন্টু মিয়া বলেন, ঢাকার নয়াবাজারে আমার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা আছে। আগে এক সময় মানিকগঞ্জ সদর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতাম। কিন্তু গাবতলীতে যানজটের কারণে এখন নবাবগঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করি। প্রায়ই বান্দুরা ব্রিজ ও নবাবগঞ্জ চৌরঙ্গীতে এসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়।
দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হানুল আয়াত বলেন, নবাবগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল থেকে আমাদের কলেজে আসতে গেলে প্রথম দুর্ভোগই বান্দুরা সেতু এবং দ্বিতীয় সমস্যাটাই নবাবগঞ্জ চৌরঙ্গী। সেতু আর চৌরঙ্গীতে বছরের পর বছরই আমরা যানজটের শিকার হচ্ছি। কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছতে পারি না। এ যানজট থেকে আমরা মুক্তি চাই।
সুশীল সমাজের মানুষ মনে করেন, যানজট নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া উচিত। এরজন্য প্রথমত নবাবগঞ্জ সদর চৌরঙ্গি ও বান্দুরা ব্রিজের ঢালে যত্রতত্র অটোগাড়ি পাকিং বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সদর চৌরঙ্গি ও বান্দুরা ব্রিজে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই যানজট কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম বলেন, নবাবগঞ্জের যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে আমরা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে সভা করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে। জনগণের ভোগান্তি করে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না।
অপরদিকে, দোহারের পৌরসভার রাস্তা দখল করে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। দোহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া কালেমা চত্ত্বরে দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে দোহার পৌরসভার চলাচলের প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কালেমা চত্বর থেকে যানবাহন চলাচলের রাস্তাটি পূর্ব দিকে গিয়ে পশুহাসপাতাল হয়ে খাড়াকান্দা এলাকায় আঞ্চলিক সড়কে সংযুক্ত হয়েছে। অথচ এই রাস্তার প্রবেশ পথ বন্ধ করে তৈরি হয়েছে জয়পাড়া পরিবহন ও ডিএনকে পরিবহনের বাসস্টান্ড।
পরিবহন মালিকরা জানান, প্রায় ৩০টির অধিক বাস রয়েছে তাদের এই স্ট্যান্ডে। একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও অদৃশ্য কারনে সড়ানো হয়নি এই অবৈধ বাসস্টান্ড। এতে পথচারিদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
জানা গেছে, বিগত ক্ষমতাশীন দলের অনেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এই স্ট্যান্ডটি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই অবৈধ বাসস্ট্যান্ড নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা।
পথচারীরা জানান, এই রাস্তাটি দিয়ে যাওয়ার পথে নানা বিড়ম্বনায় পরতে হয় তাদের। দ্রুত এই স্থান থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে দাবি জানান তারা।
এদিকে পরিবহণ মালিকদের দাবি, স্থায়ী পুনর্বাসনের মাধ্যমে একটি বাসস্ট্যান্ডের জায়গা নির্ধারণ করে দিয়ে এই দুর্ভোগ লাঘব হবে।
পরিবহণ মালিক তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরাও চাই আমাদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি জায়গা নির্ধারন করে দেওয়া হোক। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে এই বাসস্ট্যান্ডটির দায়িত্বে রয়েছেন সিরাজ ফকির ও হাবিবুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি।
দোহার-নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ (ডিএনকে) পরিবহণের দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা শুরু থেকেই এভাবেই গাড়ি রেখেছি। এ সময় লিখিত অনুমোদনের বিষয়ে বলেন, আমাদের কাছে কোনো লিখিত অনুমোদন নেই বলে জানান।
জয়পাড়া পরিবহণের দায়িত্বে থাকা সিরাজ ফকির বলেন, আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। শুনেছি প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে।
এ বিষয়ে দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুল হক বলেন, আমি দেড় বছর হয়েছে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকে বাসস্ট্যান্ডটি এভাবেই রয়েছে। যেহেতু নতুন পৌর প্রশাসন গঠন হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে কোনো সমাধানে আসা যায় কিনা।