সালমাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে, আরও দুজনের স্বীকারোক্তি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে গুম করার মামলায় আরও দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার মধ্য রাতে তারা পৃথক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ নিয়ে তিন আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন। তবে তারা আদালতকে কি বলেছেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, গত ১০ নভেম্বরে দুপুরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের জয়পুরপাড়ায় চারতলা আজিজিয়া মঞ্জিলের তৃতীয়তলার বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনের (৫০) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানি একটি দল পরদিন মধ্যরাতে কাহালুর আড়োবাড়ি গ্রামের দাদার বাড়ি থেকে ছোট ছেলে মাদ্রাসাছাত্র সাদ বিন আজিজুরকে (১৯) গ্রেফতার করে।
পরদিন এক প্রেস ব্রিফিং-এ র্যাব কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান দাবি করেন, অনলাইন জুয়াড়ি, এক নারীর সঙ্গে প্রেমে জড়িত সাদ টাকা নিয়ে বিরোধে তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ফ্রিজে লাশ গুম করেন। সাদের স্বীকারোক্তি নিয়ে শুধু বগুড়ায় নয়; সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ছেলে নাজমুস সাকিব দুপচাঁচিয়া থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সাদকে আদালতে হাজির করে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়।
দ্বিতীয় দিন (১৪ নভেম্বর) সাদ পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তিনি পুলিশকে বলেন, র্যাব তার কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। যদিও র্যাব এই অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছে।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন। তারা রাতভর অভিযান চালিয়ে তৃতীয়তলার ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানা হাসি, তার সহযোগী মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেফতার করে। তাদের হেফাজত থেকে নিহত সালমার দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির প্রধান ফটকের চাবি ও অটোরিকশা জব্দ করা হয়। আসামিরা ওই রিকশায় এসেছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, বাড়িতে অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানা হাসির সহযোগিতায় অন্য দুজন উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা ও ফ্রিজে লাশ গুম করে। যাবার আগে তারা সালমার দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও গেটের চাবি নিয়ে যায়। এছাড়া ঘটনাটি ডাকাতির প্রমাণ করতে কুড়াল দিয়ে আলমিরাতে আঘাত ও ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং জানান, মোসলেম উদ্দিন ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া অপর দুজন স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় আদালত তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুদিনের রিমান্ড শেষে হাসি ও সুমন রবিদাসকে রোববার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। হাসি বিচারক মেহেদী হাসান ও সুমন বিচারক সুমাইয়া সিদ্দিকীর কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন। রাত ১২টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে তাদের দুজনকে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে নিহতের ছেলে সাদ বিন আজিজুর এবং গ্রেফতার তিন আসামি জেলে রয়েছেন।
সোমবার বিকালে দুপচাঁচিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নাছিরুল ইসলাম জানান, আসামি মাবিয়া সুলতানা হাসি, মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাস তাদের কাছে অভিন্ন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে তারা আদালতে কি বলেছেন, কপি না পাওয়া পর্যন্ত তা বলা সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা যাবে না যে, নিহতের ছেলে সাদ নিরপরাধ।