র্যাবের দাবি মিথ্যা
ফ্রিজে গৃহবধূর লাশ বগুড়ায় তিন আসামির অভিন্ন স্বীকারোক্তি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ পিএম
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখার ঘটনায় গ্রেফতার তিন আসামি অভিন্ন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা ভাড়া বাড়িতে অনৈতিক কাজে বাধা পেয়ে গৃহবধূকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে মোসলেম উদ্দিন নামে একজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার বিকালে অপর দুজন ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানা হাসি ও সুমন রবিদাসের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার জন্য আদালতে নেওয়া হয়েছে।
নিহত গৃহবধূর ছেলে সাদ বিন আজিজুর র্যাব হেফাজতে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও পুলিশের কাছে অস্বীকার করে। পরে পুলিশ হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে।
দুপচাঁচিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নাছিরুল ইসলাম ও তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং এসব তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, ১০ নভেম্বরে দুপুরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের জয়পুরপাড়ায় চারতলা আজিজিয়া ভবনের তৃতীয়তলার বাড়ির ডিপ ফ্রিজ থেকে গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি স্থানীয় দারুস সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুর রহমানের স্ত্রী।
তাকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানি একটি দল পরদিন মধ্যরাতে কাহালুর আড়োবাড়ি গ্রামের দাদার বাড়ি থেকে ছোট ছেলে ওই মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাদ বিন আজিজুরকে গ্রেফতার করে।
পরদিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান দাবি করেন, অনলাইন জুয়াড়ি এক নারীর সঙ্গে প্রেমে জড়িত সাদ টাকা নিয়ে বিরোধে তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ফ্রিজে লাশ গুম করেন। সাদের স্বীকারোক্তি নিয়ে শুধু বগুড়ায় নয়, সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ ব্যাপারে নিহত গৃহবধূর বড় ছেলে নাজমুস সাকিব দুপচাঁচিয়া থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সাদকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সাদ পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। র্যাব তার কাছে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, বাড়িতে অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানা হাসি তার সহযোগী মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসের সহযোগিতায় উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যা ও ফ্রিজে লাশ গুম করে। যাওয়ার আগে তারা সালমার দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও গেটের চাবি নিয়ে যায়। এছাড়া ঘটনাটি ডাকাতের এমন প্রমাণ করতে কুড়াল দিয়ে আলমিরাতে আঘাত ও ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাড়ির তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া মাবিয়া খাতুন ও তার দুই সহযোগী মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেফতার করে। তাদের হেফাজত থেকে মোবাইল ফোন, রাউটার ও চাবি উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং জানান, মোসলেম উদ্দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া অপর দুজন স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় আদালত তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুপচাঁচিয়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নাছিরুল ইসলাম জানান, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেম উদ্দিন, মাবিয়া সুলতানা হাসি ও সুমন রবিদাস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে হাসি ও সুমন স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হলে রোববার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
তিনি আসা করেন, মোসলেমের মতো তারাও আদালতে একই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। বর্তমানে নিহত গৃহবধূর ছেলে সাদ ও মোসলেম বগুড়া জেলা কারাগারে রয়েছেন।
র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির একটি সূত্র জানায়, সাদের স্বীকারোক্তি আদায় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ ছাড়া শনিবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেছেন, ‘বগুড়ায় ছেলের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে আমরা কাজ করেছি। তার স্বীকারোক্তির ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। তার স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় পাশে আত্মীয়-স্বজন ছিলেন। এরপরও তদন্তের স্বার্থে ঘটনার ভিন্নতা থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘র্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা গাফিলতি পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।