ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ হারুনের মুক্তি চায় স্বেচ্ছাসেবক দল!
রুমেল আহসান, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পিএম
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কর্মচারী হারুন উর রশীদের গ্রেফতার ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে হারুন কোন দলের নেতা।
হারুনকে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। অপরদিকে ফেঞ্চুগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা হারুনকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে দাবি করছেন।
হারুনের মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন পণ্ড হয়েছে। বাধা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে হারুনকে গ্রেফতার করে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এর আগে বুধবার সিলেটের গোপালগঞ্জ উপজেলার ফুলসাইন্দ গ্রামের মাছুম আহমদ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় ১৭ নম্বর আসামি করা হয় হারুনকে।
এদিকে হারুনকে গ্রেফতারে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার সহ-সভাপতি (দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক) জহিরুল ইসলাম জহির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, নাটোর জেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হারুন অর রশীদকে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাটোর জেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমেদ রনি। হারুনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়।
অপরদিকে হারুনকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে দাবি করছেন ফেঞ্চুগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতারা। শনিবার দুপুরে সার কারখানা এলাকায় হারুনের মুক্তির দাবিতে সার কারখানা শ্রমিক কর্মচারীর ব্যানারে একাংশ মানববন্ধন করতে চাইলে এতে বাধা দেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হারুনের ছবি।
ছবিতে দেখা যায়, ২০২১ সালে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রচারণা ও গণসংযোগ করেন হারুন। একই ভাবে ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবের পক্ষে প্রচারণা করেন হারুন।
হারুনকে গ্রেফতার ও তার দলীয় পরিচয় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আসন্ন সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি পদপ্রার্থী এসএম নাঈমুল করিম খসরু বলেন, আমরা আমাদের সহকর্মীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করতে চেয়েছি। সেখানে এসে অনেকে বাধা দিয়েছেন। তারা বলছেন হারুন নাকি আওয়ামী লীগ করতেন। কিন্তু হারুন নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীরা বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে সভা-সমাবেশে যেতেন। আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের কথা মতো না চললে পরিণতি ভয়াবহ হতো। সেজন্য বাধ্য হয়ে হারুন বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর সিবিএ নির্বাচন। হারুন আমার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। মামলা গত ১৩ নভেম্বর হওয়ার পরপরই পরদিন রাতে হারুনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ মামলায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা আসামি। তারা দিব্যি প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক এহসান সাহেদ বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আওয়ামী লীগকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। হারুন একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল। বিগত সিবিএ নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনগুলোতে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী পক্ষে ভোট চেয়ে কাজ করেছিলেন। বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। তাকে (হারুনকে) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিস্ফোরক মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করা আর জুলাই আন্দোলনে শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা।
তিনি আরও বলেন, হারুনসহ আওয়ামী লীগের দোসররা যেন সিবিএ নির্বাচনের মাধ্যমে পুনর্বাসন না হতে পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান খান বলেন, সিলেট কোতোয়ালি থানার একটি বিস্ফোরক মামলায় হারুনকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।