কালাইয়ে মাছের মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
জয়পুরহাটের কালাইয়ে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব নবান্ন উপলক্ষ্যে মাছের মেলাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসব আর আনন্দের আমেজ দেখা গেছে।
জানা গেছে, এই এক দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনেন এ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজন। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে প্রায় বিশ বছর ধরে চলছে মেলাটি। প্রতি বছরের মতো এবারও নবান্ন উপলক্ষ্যে বসা মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ মাছ কিনতে আসেন। বোয়াল, গ্লাসকার্প, রুই, সিলভার কার্প, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দিয়ে পসরা সাজায় ব্যবসায়ীরা।
রোববার ভোর থেকেই কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে বসা রকমারি দোকানগুলোতে চলে মাছ বেচা-কেনার ধুম।
মেলায় ঢুকেই সারি সারি দোকানগুলোতে চোখে পড়ে মন-জুড়ানো সব মাছের পসরা। দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা এসেছেন মাছ বিক্রির জন্য। দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো মাছগুলো প্রায় সবই বড় আকারের। মেলায় ছোট মাছ নেই বললেই চলে। আছে বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ও পাঙাশ মাছ। চাষের মাছের পাশাপাশি নদীর বাঘাইড়, গাঙচিতল এবং দু-এক ধরনের সামুদ্রিক মাছও উঠেছে এ মেলায়। সবাই দরদাম করে মাছ কিনছেন। আকারভেদে ৩০০ থেকে ১৮০০ টাকায় প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে।
মাছের মেলাটিকে ঘিরে এ দিনে নিকটবর্তী উপজেলাসহ ২০-২৫টি গ্রাম-মহল্লার মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দিন সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী পছন্দের মাছ কিনে বাড়ি ফিরে। এবার মেলায় ওঠা বড় মাছগুলোর ওজন ছিল প্রায় ১০ থেকে ১৩ কেজি। উৎসবমুখর পরিবেশে চলে মাছ বেচা-কেনা। এই মেলা উদযাপন করতে আসেন জামাই-মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজনরা।
মেলায় মাছ কিনতে আসা পৌরসভার ডা.মনোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, সোহেল, শিক্ষক নাফসি তালুকদার, উপজেলার পুনট ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান, বৌরাগীর মোড়ের মকুল হোসেনসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসা এ মাছের মেলায় প্রচুর আমদানি সত্ত্বেও দাম হাকা হয় অনেকটা বেশি।
শহিদুল ইসলাম এসেছেন তার নাতীকে নিয়ে। তিনি একটি মাছ কিনেছেন ৬ হাজার টাকা দিয়ে। নাতি-নাতনী মেয়ে-জামাইসহ নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করেছেন। সবাইকে নতুন চালের ভাত এবং পছন্দের মাছ খাওয়াবেন বলে জানান তিনি।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেক বেশি। মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচা-কেনা সে তুলনায় কম। তারপরও বেশি লাভেরই প্রত্যাশা করছেন তারা।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে মাছের মেলার প্রথম উদ্যেক্তা রহুল আমিন তালুকদার জানান, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে মেলাটি উপভোগ করা হয়। আগামীতে মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম জানান, নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে ১লা অগ্রাহায়ণ কালাই উপজেলা ৫শিরা বাজারে মাছের মেলা আয়োজন করে থাকে। এটা শুধু মাছ বিক্রি নয় আনন্দ উৎসবও বটে। যেখানে কেনা-বেচা ক্রয় করা ছাড়া অনেকে শুধু দেখতে আসেন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছসহ চিড়িং বিক্রি করা হয়।
তিনি আরও জানান, কালাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মেলাটি সার্বক্ষণিক পরির্দশন করা হচ্ছে। যাতে করে করে মেলার মাছে ফরমালিন ব্যবহার না করতে পারে।