Logo
Logo
×

সারাদেশ

ধরাছোঁয়ার বাইরে হোতা

পুলিশের সঙ্গে আঁতাত: ফের সক্রিয় পরিবহণ চাঁদাবাজরা

Icon

এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ পিএম

পুলিশের সঙ্গে আঁতাত: ফের সক্রিয় পরিবহণ চাঁদাবাজরা

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে পুলিশের নামে মাসোহারা আদায় করা একটি চক্র ফের চাঁদাবাজিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা নগরীতে চলাচলকারী পরিবহণ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে। চাঁদা না দিলে সার্জেন্টদের মাধ্যমে ট্রাফিক আইনে মামলা ও জরিমানা করে পরিবহণ মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবহণ নেতাদের অভিযোগ এ চক্রের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের সখ্য থাকায় ভুক্তভোগীদের একাধিক অভিযোগের পরও চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

নগরীর হালিশহর, দেওয়ানহাট, অলঙ্কার মোড়, একে খান মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, বন্দর, নিউমার্কেট, কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, ইপিজেড, অক্সিজেন মোড়সহ ১৬ থানায় অন্তত অর্ধশতাধিক স্পট থেকে বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠন বা সমিতির নামে চাঁদা আদায় করা হতো। ওয়েবিলের নামেও প্রতিদিন আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর কথিত সংগঠন বা সমিতির নামে অবৈধ চাঁদা নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গা ঢাকা দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও শ্রমিক নেতারা। অনেকে আবার বিভিন্ন এলাকায় চালকদের হাতে অপমান ও অপদস্থ হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই চিহ্নিত চাঁদাবাজরা আবারও আগের রূপে ফিরে আসছে।

জানা গেছে, নগরীর হালিশহর-নিউমার্কেট ৩ নম্বর রুটে অন্তত আড়াই শতাধিক অটো টেম্পো চলাচল করে। এই রুটে পরিবহণ চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গাড়ির মালিকরা। ঋণে জর্জরিত হয়ে নিজের দুটি অটো টেম্পোর মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছেন আলাউদ্দিন। গণ-অভ্যুত্থানের পর কোনো চাঁদা ছাড়াই একটি টেম্পোর আয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি পরিবহণ চাঁদাবাজারা ফের মাসোহারা দাবি করায় তিনি আবার শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে গত বুধবার সিএমপি কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন আলাউদ্দিন। পুলিশের নামে তার কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এই প্রতিবাদের কারণে তার গাড়িগুলো মাসে একাধিকবার ‘টো’ করা হতো। এছাড়া গাড়ি ছাড়াতে গেলে দ্বিগুণ টাকা দিতে হতো। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাকে একটি গাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। পুলিশের নামে মাসোহারা নিচ্ছে আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি। এ কাজে তার বেশ কয়েকজন সহকারীও রয়েছে। এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ইউনুস মোল্লা নামে এক ব্যক্তিও আবুদল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীতে চলাচলকারী অটো টেম্পোর মধ্যে কোনো কোনো গাড়ির ডকুমেন্টস নেই বা মেয়াদ নেই সেগুলোর তালিকা রয়েছে আবদুল্লাহর কাছে। তার সহযোগীদের মাধ্যমে সেসব গাড়ি সড়কে উঠলেই সার্জেন্টদের কাছে তালিকা দেওয়া হয়। এরপর আটক করে মামলার পর আবদুল্লাহই ট্রাফিক অফিসে গিয়ে গাড়িগুলো ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন। পরে তার সঙ্গে মাসিক চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট টেম্পোর মালিক। আর এভাবেই দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছে আবদুল্লাহ।

জানা গেছে, আবদুল্লাহ প্রতিদিন সিএমপির কোনো না কোনো ট্রাফিক অফিস থেকে গাড়ি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়। সাধারণ মানুষের জন্য ‘টো’ হওয়া একটি টেম্পো ছাড়াতে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা লাগলেও আবদুল্লাহ সেটি অর্ধেক ফি দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে পারে। তার সহযোগী হিসাবে রয়েছে শহিদ। তাদের দুজনের সিএমপির বন্দর, পশ্চিম ও দক্ষিণ জোনের ট্রাফিক অফিসে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাড়িয়ে দেওয়ার তদবির শুরু করেছে আবদুল্লাহ। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক হলে কমপক্ষে ১০ দিন পর ছাড়া হয়। তবে আটকের দু-একদিনের মধ্যে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ নিজেকে রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় দিয়ে পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ট্রাফিকের বিভিন্ন সার্জেন্ট ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতেন।

তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ৫ আগস্টের পর আবদুল্লাহ ও তার সহযোগীরা গা ঢাকা দিয়েছিল। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও পুলিশের নামে মাসোহারা আদায়ে চাপ দিচ্ছে পরিবহণ মালিকদের। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক অলি আহাম্মদ বলেন, ‘আবদুল্লাহ পুলিশের নামে মাসোহারা আদায় করছে বলে জেনেছি। তার সঙ্গে পুলিশের সখ্য রয়েছে। আমরা এর আগেও ট্রাফিকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। পুলিশও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সে কখনো আইনের আওতায় আসেনি। টেম্পো লাইনে তার প্রভাব বেশি। কেবল পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে ওই ব্যক্তি বর্তমানে কোটি টাকার মালিক।’ একই কথা বলেছেন, অটো টেম্পো মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের ৩ নম্বর ও ১ নম্বর রুটের গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আবদুল্লাহ মাসোহারা দাবি করছে বলে আমাকে জানিয়েছে। তাকে (আবদুল্লাহ) টাকা না দিলে ট্রাফিকের মামলা এবং জরিমানা দিয়ে সড়কে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না-এমনটাই আশঙ্কা করছে মালিকরা।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ বলেন, ‘কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে আমি জড়িত নই। তাছাড়া পুলিশের সঙ্গেও আমার সখ্য নেই। আমি গাড়ি ব্যবসা করি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া কোনো পুলিশ যদি অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়ায়, নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগেও যেমন ছিল, এখনো একই রয়েছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম