Logo
Logo
×

সারাদেশ

জনবল সংকটে নবাবগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা ব্যাহত

Icon

কাজী সোহেল, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ পিএম

জনবল সংকটে নবাবগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা ব্যাহত

জনবল সংকটের কারণে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না হাজারো মানুষ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে পাঁচটি পদে কোনো জনবল নেই। বন্ধ রয়েছে এক্স-রে, রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। 

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসা শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধরা প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন হাজারও মানুষ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। জনবল সংকট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানিয়েছেন, আমি বার বার শিকারীপাড়া ইউনিয়ন ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে’র জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না।

সরজমিনে গিয়ে স্থানীয় ও চিকিৎসা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সপ্তাহে একদিন রোগীর চিকিৎসা দিতে উপজেলা থেকে একজন ডাক্তার আসেন এই কেন্দ্রে। 

হাগ্রাদী এলাকার মিজান মল্লিক জানান, এখানে চিকিৎসা পান না অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় আড্ডা জমায় এলাকার মাদকসেবীরা। 

চিকিৎসা নিতে আসা আসমা বেগম জানান, আমি গরীব মানুষ। চিকিৎসা নিতে এসে দেখি মহিলা ডাক্তার নেই। মহিলা ডাক্তার না থাকায় আমরা নারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। এই যদি হয় একটি সরকারি হাসপাতালের অবস্থা, তাহলে আমরা গরীবরা কই যাইতাম।

সুমন রহমান নামে এক রোগী জানান, এই হাসপাতালে এক্স-রে, রক্তসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। এ কারণে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অতিরিক্ত সময় ও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা করেছি বাধ্য হয়ে। তাদের ব্যবসা জমজমাট আর আমরা তো শেষ। যেন এসব দেখার কেউ নাই।

পরিবেশ ও সমাজকর্মী মোস্তাক আহমেদ বলেন, সুচিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। এ হাসপাতালে জনবল সংকট দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ এভাবে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অচল অবস্থায় পরে থাকতে পারে না। কোথায় দূর্বলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। আর কেন এটি স্থানীয় নেতাদের ও মাদক কারবারীদের আস্তানা করা হয়েছিল, তার দায়িত্ব প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। আমরা চেষ্টা করব চিকিৎসা কার্যক্রম কিভাবে চালু করা যায়, তা করতে।

শিকারীপাড়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইন্সপেক্টর (এফপিআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এখনো ৫টি পদে কোনো জনবলই নেই। পদগুলো হচ্ছে- উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও), পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা (এফডাবলিওভি) ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) এবং আয়া। 

শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিপুল কুমার পান্ডে বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কথা মতো সপ্তাহে একদিন রোববার আমি শিকারীপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বসি। যদি রোগী আসে তাহলে যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে থাকি। তবে এতবড় একটা ইউনিয়নে একার পক্ষে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অতিদ্রুত লোক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। 

উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ঢাকা জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য সেবার ক্যাটাগরিতে আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে থাকি। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত জনশক্তির অভাব রয়েছে। সাভার ও ধামরাই উপজেলা সেবা প্রদানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। 

তিনি জানান, যেখানে উপজেলায় ১১ জন এসএসিএমও কর্মরত থাকার কথা সেখানে রয়েছে মাত্র ২ জন। এফডাবলিওভি থাকার কথা ১৪ জন আছে ৫ জন। ফার্মাসিস্ট থাকবে ১১ জন অথচ আছে মাত্র একজন। এমএলএসএস ১১ জনের পরিবর্তে আছে ৪ জন এবং ২ জন আয়া রয়েছে। যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ের সেবা প্রদান। যদি সরকার নিয়োগ নিশ্চিত করে তাহলে সমস্যা থাকবে না। আমাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবহিত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম