Logo
Logo
×

সারাদেশ

নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় আবদুল্লাহ, দেওয়া হলো গার্ড অব অনার

Icon

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় আবদুল্লাহ, দেওয়া হলো গার্ড অব অনার

কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ তিন মাস পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মারা গেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। জানাজায় ইমামতি করেন মুফতি মাওলানা সায়্যেদুল বাশার। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

পরে যশোরের বেনাপোলে তার নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে নানা-নানির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আব্দুল্লাহ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসান, বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া, যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক (সাবু), যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতা নুরুজ্জামান লিটন।

শার্শা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুজ্জামান মধু, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবীবুর রহমান, থানা আমির রেজাউল ইসলাম, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসান জহির, বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান ও সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে যান নৌ-পরিবহণ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামে আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান। এ সময় তার মামা ইসরাইল সর্দার ও বড় দুই ভাই উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সান্ত্বনা দেন উপদেষ্টা। সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। আব্দুল্লাহকে যেখানে দাফন করা হবে সেই কবরস্থানও ঘুরে দেখেন তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আব্দুল্লাহর মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি আর শোকে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

আবদুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার পেশায় একজন শ্রমিক। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আব্দুল্লাহ ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল্লাহ। তাকে ঘিরে আকাশ সমান স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির।

বাবার সহযোগিতায় আর নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। মেধা ও আচরণের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন আব্দুল্লাহ। তিনি ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন। তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন।

প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও তাকে হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

এরপর তাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

গত ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে মারা যান।

শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসান জানান, রাষ্ট্রীয় বিশেষ মর্যাদায় শহিদ আবদুল্লাহকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। আমরা শহিদ আবদুল্লাহর পরিবারের পাশে আছি এবং থাকব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম