ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ ১৭ বছর
টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে দুর্যোগ ঝুঁকিতে বরগুনাবাসী
নুরুল আহাদ অনিক, বরগুনা
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
২০০৭ সালের এই দিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল বরগুনার উপকূল। হাজারো মানুষ হারিয়েছে প্রাণ, নিঃস্ব হয়েছে লাখো পরিবার। সিডরের দীর্ঘ ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় বরগুনার জন্য নির্মাণ হয়নি টেকসই বেরিবাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বরগুনার ৮৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ আছে মাত্র ৭৮ কিলোমিটার।
প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরে’ প্রাণ হারান বরগুনা জেলার ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ, ধ্বংস হয় ৭৭,০০০ ঘর-বাড়ি এবং ৪৮৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বরগুনায় টেকসই বেরিবাঁধের অভাবে প্রতি বছরই অমাবস্যা-পূর্ণিমা বা সামান্য ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের জমি ও ঘর-বাড়ি। সেই সঙ্গে মানুষ হারাচ্ছে জীবিকা, নিরাপত্তা, এবং বসবাসের নিশ্চয়তা। সিডরের সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও তাড়া করে উপকূলের মানুষকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার ২২টি পোল্ডারের আওতায় প্রায় ৮০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটারই নিম্ন উচ্চতার, যা প্রতি বছরই বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকে। সম্প্রতি ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার ১৩ কিলোমিটার বাঁধের তীর সংরক্ষণ, ৯ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ এবং ৫১ কিলোমিটার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান।
বরগুনা সদর উপজেলার ঢালভাঙা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন স্ত্রী ও সন্তানকে। সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ১৭ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের কষ্টের কথা কেউ শুনতে চায় না।
বরগুনা পরিবেশকর্মী রিয়াজ আহমেদ মুসা বলেন, বরগুনার মানুষের প্রধান দাবি, টেকসই বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি ও স্থায়ী সমাধান। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের আতঙ্কে থাকা মানুষ টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন ধরে উপকূলের মানুষের টেকসই বেড়িবাঁধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা আজও কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
বরগুনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল যুগান্তরকে বলেন, বরগুনায় যে বেড়িবাঁধ আছে প্রায় সবই পাকিস্তান আমলের ডিজাইন করা এবং প্রয়োজনের তুলনায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই বরগুনার নদী তীরবর্তী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেক স্থান আছে যেখানে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে পানি বৃদ্ধি হলেই ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। আমাদের দাবি হচ্ছে উচু এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে কিন্তু বারবারই আমরা শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারি বরদ্ধ নেই, বরাদ্ধ যা আসে তাও নামে মাত্র।
তিনি আরও বলেন, আবার যেসব বরাদ্ধ আসে সে বরাদ্ধেরও সঠিক বাস্তবায়ন হয় না ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লোপাটের কারণে এই বেড়িবাঁধ দিয়ে আমার মতে উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করা সম্ভব না।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব যুগান্তরকে বলেন, বরগুনায় ৮৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা সেটা মেরামত করি। আর বেড়িবাঁধ মেরামত করা আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে আমাদের স্থায়ী বেড়িবাঁধের পরিমাণ ৭৮ কিলোমিটার। এছাড়াও স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্যে কয়েকটি প্রকল্প প্রস্থাবিত আছে।