সাংবাদিককে বন কর্মকর্তার এ কেমন হুঁশিয়ারি!
নাজিম উদ্দীন রানা, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পিএম
‘আমি আমার জেলা ছাত্রশিবিরের সহ-সভাপতি পদে ছিলাম। আপনার বিষয়টি লামা উপজেলা শিবিরকে জানিয়ে দিচ্ছি।অলরেডি লোহাগাড়া শিবিরকে বলা হয়েছে।’ এমন খুদেবার্তা হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিবেদককে পাঠান চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন।
গত ১২ নভেম্বর বিকালে প্রতিবেদক চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন সাতগড়ে সুফল বাগানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মোবাইল ফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারপর উপরোল্লিখিত খুদেবার্তাটি পাঠিয়ে প্রতিবেদককে হুমকি দেন। সংবাদ প্রকাশিত হলে মামলার হুমকিও দেন তিনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিবেদক বিষয়টি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিম ও চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অবহিত করেন।
সংবাদ প্রকাশে বিরত রাখার জন্য সাংবাদিককে বন কর্মকর্তার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি প্রচার হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অচিরেই হুমকিদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কর্মসূচির ঘোষণা দেন লোহাগাড়া প্রেস ক্লাব সভাপতি মো. তাজউদ্দীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন আচরণ দুঃখজনক। তিনি কেন এমন বার্তা পাঠিয়েছেন সেই বিষয়ে উনাকে জবাবদিহি করতে হবে।
সরেজমিন দেখা যায়, সাতগড় বনবিটের পূর্বপাশের তেরপোলা, কইন্যারতলী, বড়তলীর দক্ষিণে, বাগপাচা ঝিরি পর্যন্ত এলাকায় বনবিভাগ যে ৪০ হেক্টর বাগান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার হিসেব শুধু কাগজে-কলমে ও সাইনবোর্ডে সীমাবদ্ধ। সাইনবোর্ডে বাগানের চারার সংখ্যা ও গাছের প্রজাতির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও বাগানের সাইনবোর্ডে গামার, চিকরাশি, আকাশমনি, পিতরাজ, ধারমারা, সোনালু, কাজুবাদাম, ছাতিয়ান, সিভিট, রক্তচন্দন, খয়ের, আমলকি, হরিতকী, বহেরা, অর্জুন, কাঞ্চলভাদী, নিম, বকাইন, শিমুল, পলাশ, কাঞ্চন, চাকুয়া কড়ই, তেতুয়া কড়ই, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১ লাখ গাছের চারা লাগানোর কথা থাকলেও সরেজমিন সাইনবোর্ডের প্রজাতির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। কয়েকটি প্রজাতির দেখা মিললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাগানো হয়েছে আকাশমনি ও অন্য গাছ।
এ বিষয়টি নিয়ে সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেনের কাছে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, সুফল বাগানের অনিয়মের বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।