স্কুলের মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন, ঢাকা উত্তর
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম
সাভারের আশুলিয়ায় ২০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে মনোয়ার হোসেন রাজু ওরফে রাজ কুমারের নেতৃত্বে তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ন্যাশনাল ইনিশিয়াল অ্যান্ড হাইস্কুল নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এমনকি চাঁদা না দিলে স্কুলের মেয়েদের গণধর্ষণের হুমকি দেয় তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে হামলার বিষয়ে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার এসআই মো. মাসুদ আল মামুন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া মোল্লা বাড়ি মসজিদসংলগ্ন অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার রাতে রাজ কুমার ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতর্কিত হামলা চালায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে তালা লাগানো দেখে রাম দা দিয়ে ফটকে কোপাতে থাকে। এ সময় আশপাশের দোকানিরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে দোকানপাটের সাঁটারও কোপাতে থাকে। ২০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়া হলে স্কুলটি চালাতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেয় রাজ কুমার ও তার বাহিনী।
ইদ্রিস আলী নামে এক টেইলার্স দোকানি বলেন, রাজুর অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। সে পিস্তল দিয়ে ফায়ারিং করতে করতে স্কুলের সামনে এসে প্রথমে সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিমকে স্কুল থেকে বের হতে বলে। সে বের না হলে স্কুলের ফটক ও দোকানপাট কোপাতে থাকে এবং হুমকি দিয়ে চলে যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম বলেন, সন্ত্রাসী বাহিনী মনোয়ার হোসেন রাজ কুমার ওরফে রাজুর নেতৃত্বে রাকিব, লিটন, রাজুর ভাতিজা নাহিদ, সোহাগ, রাসেল ও কমরেড রাকিব আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এসে পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে। তখন শিক্ষকরা দৌড়ে গিয়ে দ্বিতীয় ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময়ে তারা স্কুলের ভেতরে ঢুকতে পারলে আমাকে হত্যা করত। তারা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে স্কুল চালাতে পারব না। এমনকি স্কুলের মেয়েদের ধর্ষণ করা হবে বলেও হুমকি দেয়।
প্রধান শিক্ষক আরও অভিযোগ করে বলেন, এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের অস্থিতিশীল অবস্থা থাকায় তখন এলাকাবাসী ডাকাত আতঙ্কে ছিলেন। ওই সময়ে আমরা স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসী মিলে রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য মিটিং করি এবং সেই অনুযায়ী রাতে পাহারা দেই। আমরা মিটিং ও রাতে পাহারা কেন দিলাম এটা রাজুর অপকর্মমূলক কাজে ব্যাঘাত ঘটে। সেই থেকে আমার ওপর সে ক্ষিপ্ত হয়। আমি এ বিষয়ে সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আল-মামুন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এবং এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিদর্শন করেছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সরকার বলেন, এ বিষয়ে ওই স্কুলের এক শিক্ষক আমাকে জানানোর পরে থানার শরণাপন্ন হতে বলেছি। আমি পুলিশ বাহিনীকে বলে দিয়েছি। সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।