শম্ভুর গ্রেফতারে এলাকায় আনন্দের বন্যা, দ্রুত শাস্তি দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
বরগুনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর গ্রেফতারের খবরে তার নির্বাচনি এলাকা বরগুনা- আমতলী-তালতলীতে আনন্দের বন্যা বইছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার দলের নেতাকর্মীরা দ্রুত তার শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা গেছে, বরগুনা-১ আসনের পাঁচবারের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তার রাজনৈতিক জীবনে গড়ে তুলেছেন অপরাজনীতির সংস্কৃতি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। গড়ে তুলেছেন অপরাধের অভয়ারণ্য। ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আমতলী উপজেলায় এক সময়ের বিএনপি নেতা সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান খলিফা ও তার ভাই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানকে দলে এনে গড়ে তুলেছেন অপরাজনীতির সংস্কৃতি। তাদের মাধ্যমে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের শোষণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন এমন অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলের মধ্যে জায়গা দেননি শম্ভু।
কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তালতলী উপজেলায় রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, জাকির হোসেন চুন্নু মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন নেতার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছেন শম্ভু। পাঁচবার সাংসদ থাকাকালীন অবস্থায় কয়েকশ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঢাকাসহ ভারত, আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন অট্টালিকা এমন দাবি দলীয় নেতাকর্মীদের। গত ১৫ বছরে তিনি বরগুনা-আমতলী-তালতলীর মানুষকে শোষণ ও নির্যাতন করেছেন। দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে রেখেছেন। তার পছন্দের নেতাকর্মী দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন।
গত ১৫ বছরে শম্ভু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের দুঃশাসনে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে- এমন দাবি তৃণমূল কর্মী আফজাল হোসেনের। ওই সময়ে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান, চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খানসহ গুটিকয়েক নেতা আমতলীতে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তাদের ইশারা ছাড়া আমতলীর একটি পাতাও নড়তে পারেনি। জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালন পালনসহ সব অপরাধই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিশোর গ্যাং লিডার ইসফাক আহম্মেদ তোহা ও সবুজ ম্যালাকারসহ তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষদের মারধর করাতো।
উপজেলার নেতারা সব বাণিজ্যের টাকার সিংহভাগ পৌঁছে দিতেন এমপি শম্ভুর কাছে। তার এমন কৃতকর্মের খবর পৌঁছে যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে। ফলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েও শম্ভু স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ শেষে ভারতে পালিয়ে গেলে শম্ভু আত্মগোপনে চলে যান। গত তিন মাস নিরুদ্দেশ ছিলেন তিনি। গত সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা ডিবি পুলিশের হাতে শম্ভু গ্রেফতার হন। তার গ্রেফতারের খবর বরগুনা-আমতলী-তালতলীতে ছড়িয়ে পড়লে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার গ্রেফতারের খবরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। দ্রুত তার শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
আমতলী উপজেলার যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিরাজ হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন- শম্ভু তার পছন্দের লোক দিয়ে দুইটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করেছেন।
আমতলী উপজেলার সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান তামান্না আফরোজ মনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন- গত ১৫ বছরে শম্ভুর কাছে যেতে পারিনি। একদিন দেখা করার জন্য বেশ চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেননি।