পলাশবাড়ীতে প্রতিবন্ধী মা-ছেলে এখন ঠিকানাহীন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম
প্রতিবন্ধী মা ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলে কত ঈদ, কত দিনরাত পার করেছেন অনাহারে। কেউ এগিয়ে আসেনি প্রতিবন্ধী মা-ছেলের জন্য এক প্লেট গোস্ত-ভাত নিয়ে। অনাহারে পড়ে থেকেছেন ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায়। গাইবান্ধার কিশোরগাড়ি গ্রাম থেকে তাদের এই কষ্টের চিত্র তুলে ধরা হয়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা কয়েদ ভানু (৯৫)। স্বামী আলতাফ মিয়া মারা গেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে। রেখে গেছেন দরিদ্রতা আর ২ মেয়ে ও ১ দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে ও প্রতিবন্ধী স্ত্রীর সংসার।
নিজের জমিজমা নেই। সেই কারণে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে কাজ করে জুটতো খাবার আর গোয়াল ঘরে আশ্রয়। ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে অত্যন্ত দরিদ্র ঘরে। বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে রয়েছে দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে আসকর আলী (৬৫)।
মা কয়েদ ভানু প্রতিবন্ধী ছেলে আসকর আলীকে ছেড়ে যেতে পারেনি। বয়সের ভারে শরীর চলে না তাই এখন আর ভিক্ষাও করতে পারেন না। অনাহার অর্ধাহারে প্রতিবন্ধি ছেলেকে নিয়ে মা পড়ে থাকেন যেখানে সেখানে।
গেল বছর কনকনে শীতে কাগজের আড়ালে মা ছেলে কিশোরগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে শুয়ে শীতে কাঁপছিলেন। চেয়ারম্যানের চোখে পড়েনি, তাই কম্বলও জোটেনি প্রতিবন্ধী মা ছেলের ভাগ্যে।
এলাকার তামিম মিডিয়া নামের একটি সংগঠনের কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় দুই প্রতিবন্ধীর মধ্যে একজনের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড জুটেছে। কিন্তু মায়ের নামে বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়নি।
তরিকুল ইসলাম তামিম নামের এক সমাজকর্মী বলেন, দুই বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী মা ও ছেলে কতোদিন আগে তৃপ্তিসহকারে মাংস ভাত খেয়েছে তা বলতে পারে না। সরকারিভাবে আশ্রায়নের ঘরও তাদের কপালে জোটেনি।
কয়েদ ভানু বলেন, হামার কাছে ট্যাকা চায় বাবা। হামি কোটে পামো ট্যাকা? সেই জন্যে আশ্রয়নের ঘরও পাইনি। এলাকার মানুষ, চেয়ারম্যান, মেম্বার সবাই জানে হামরা মাও ব্যাটা দুজনে প্রতিবন্ধী। মাইনসে দিলে খাই, না দিলে প্যাটত কষ্ট দিয়া পড়ি থাকি এটে সেটে। মোর কষ্ট দেখিয়া চ্যাংড়াগুলা একান দোচালা ঘর তুলি দিছে মাইসের জায়গায়। সেটাও ভাংগি দিলো, এখন কোটে যাই বাবা? হামার যে আর মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলো না। দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে আসকর আলীক নিয়া কোথায় যাব জানি না। হামাক তোমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন।
এলাকার যুবক তরিকুল ইসলাম তামিম, রব্বানী শেখ, মামুন মিয়া, জাকারিয়া রহমান দুলাল, মোস্তফা মন্ডল, আহসান হাবীবরা জানান, আমরা অসহায় মানুষের জন্য কাজ করি। আমরা চেষ্টা করে ঘর তুলে দিয়েছিলাম অন্যের জায়গায়; কিন্তু সেখান থেকেও তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন তার জন্য কোনো জায়গা কেউ না দিলে তার ভাগ্যে কি আছে কেউ জানি না।
কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আগের চেয়ারম্যান ১৫ বছর ছিলেন। তিনি এই দুই প্রতিবন্ধীর জন্য কিছুই করেনি। তিনি আন্তরিক হলে অন্তত একটা সরকারি ঘরের ব্যবস্থা হতো। তিনি যে কেন আশ্রয়ণের ঘর পেলেন না তা বলতে পারি না। তিনি আশ্রয়ণের ঘর পাওয়ার উপযুক্ত মানুষ। তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।