Logo
Logo
×

সারাদেশ

ফেসবুকে পরকীয়া, প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে হত্যা

Icon

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম

ফেসবুকে পরকীয়া, প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে হত্যা

ফেসবুকের মাধ্যমে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া এক গৃহবধূ ও এক যুবকের প্রেমের বলি হয়েছেন গৃহবধূর স্বামী আলী মোল্লা। স্ত্রীর সহায়তায় প্রেমিক রাকিব (২২) দুই বন্ধুসহ বগুড়া থেকে কেরানীগঞ্জে এসে আলী মোল্লাকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ঘাতক স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন।

মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। বগুড়া থেকে প্রেমিকসহ ৩ আসামি ও কেরানীগঞ্জ থেকে হত্যার পরিকল্পনাকারী গৃহবধূ আসমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।

৬ নভেম্বর রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঝিলমিল আবাসন প্রজেক্টে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয় আলী মোল্লাকে। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আসমার সঙ্গে আলী মোল্লার বছর ১০ আগে বিয়ে হয়। আসমা, আলীর ২য় স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে সন্তান হয়েছে। আলী পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। আলীর সংসারে আসমা সুখী ছিলেন না। এ অবস্থায় বছর দেড়েক পূর্বে ফেসবুকের মাধ্যমে রাকিব নামে এক যুবকের সঙ্গে আসমার পরিচয় হয়। সরাসরি দেখা না হলেও তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন৷ স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি আলী টের পেয়ে যায়।

একদিন আসমা ও তার ফেসবুক প্রেমিককে গালমন্দও করেন। তারা কখনো এক হতে পারবে না-এটা তারা মেনে নিতে পারছিল না। রাকিব আসমাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু পথের কাটা আলী।

এক মাস আগে বগুড়ায় বসে দুই বন্ধু জিহাদ (২০) ও মো. শামীনকে (২১) নিয়ে আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে রাকিব। হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন আগে তারা বগুড়ার শেরপুর থানাধীন বারদুয়ারী বাজার থেকে ২টি চাকু কিনে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় বগুড়া থেকে রওনা হয়ে বাসযোগে তিনজন (রাকিব, শামীন ও জিহাদ) ঢাকায় আসেন। বিকাল ৫টার দিকে আসমার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। এটা আসমা ও রাকিবের প্রথম সরাসরি দেখা।

হত্যাকাণ্ড শেষ করতে আসমা রাকিবকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। এ সময় আলী বাড়িতে ছিল না। অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল। আসামিরা টাকা নেওয়ার পর পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর বাজারে অবস্থান করতে থাকে। আলী রাতে বাসায় ফিরলে আসমা কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপে রাকিবকে জানায়। আলীর মোবাইল নম্বর দেয়, যাতে ফোন করে কৌশলে তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে হত্যা করা যায়।

আসমার কথামতো রাত ৯টার দিকে যাত্রীসেজে আলীকে ফোন দেয় রাকিব। তার অটোরিকশায় হাসনাবাদ যেতে চায়। আলী তার বাড়ির সামনে থেকে ঘাতকদের যাত্রী মনে করে তার অটোরিকশায় তুলে হাসনাবাদের উদ্দেশ্য রওনা দেন। সেখান থেকে আবার কদমতলী আসে। সেখান থেকে পুনরায় তেঘরিয়া আসার কথা বলে আলীর অটোরিকশায় ঘাতকরা ঘুরতে থাকে। তারা আলীকে হত্যার জন্য নির্জন জায়গা খুঁজছিল।

পথিমধ্যে অটোরিকশা নিয়ে তারা নির্জন ঝিলমিল আবাসন প্রজেক্ট ঢুকে। অটোরিকশার সামনে চালক আলীর পাশে বসা ছিল রাকিব। প্রথমে সে ছুরি দিয়ে আলীকে আঘাত করে এরপর জিহাদ ছুরি দিয়ে আলীকে একাধিকবার আঘাত করে। পরে তারা বগুড়ায় পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার আগে আসমাকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত হোয়াটসঅ্যাপে জানায় আসামি রাকিব।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড ছিল নিহত আলীর ২য় স্ত্রী। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি বাদী হয়ে মামলাও করে।

তিনি আরও জানান, তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানা তথ্য জানতে পারি। পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করা হয়। আসমাকে গ্রেফতারের পর বগুড়া থেকে প্রেমিক রাকিব ও তার দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম