কয়লা নিয়ে বিপাকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
বিপুল পরিমাণ মজুত গড়ে ওঠায় এখন কয়লা রাখার জায়গা নেই দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ইয়ার্ডে। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
এই খনির ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আশানুরূপ কয়লা নিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
খনির ইয়ার্ডে কয়লা রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে বাধাগ্রস্ত হতে পারে দেশের একমাত্র ভ‚গর্ভস্থ এই কয়লা খনির উত্তোলন কার্যক্রম। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে খনিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন খনিসংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, খনির ১৪১৪ নম্বর ফেইস থেকে চলতি বছরের ৩ আগস্ট কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই ফেইস থেকে কয়লা উত্তোলন হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন। আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরও এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের আশা করা হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রতিদিন এই খনির অভ্যন্তর থেকে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার মেট্রিক টন কয়লা গ্রহণ করায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন কয়লা জমা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খনির ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যে জমা পড়েছে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুত।
তিনি বলেন, কয়লা রাখার জন্য খনির উপরিভাগে তিনটি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে রয়েছে সেডিমেন্ট কয়লা। বাকি দুটি ইয়ার্ডে কয়লার ধারণক্ষমতা দুই লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ইতোমধ্যেই সেখানে আড়াই লাখ মেট্রিক টন কয়লার মজুত গড়ে উঠেছে। উত্তোলনের তুলনায় প্রতিদিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্ধেক কয়লা সরবরাহ করায় মজুতের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দ্রুত কয়লা গ্রহণ করার জন্য ২৩ অক্টোবর লিখিতভাবে ও বিভিন্ন সময়ে মৌখিকভাবে জানানো হলেও বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যাপ্ত কয়লা গ্রহণ করতে পারছে না।
কয়লা উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুত কয়লা অপসারণ করা না হলে খনির কয়লা উত্তোলন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলছেন, উৎপাদনকাজ বাধাগ্রস্ত হলে খনির অভ্যন্তরে ১৪১৪নং ফেইসে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ হতে পারে ও খনির উপরিভাগের স্ত‚পকৃত কয়লায় স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বালন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তারা জানান, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতিদিন কয়লায় প্রচুর পরিমাণ পানি প্রয়োগ করতে হচ্ছে। মজুত বেড়ে যাওয়ায় নিয়মিত পানি প্রয়োগ করাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে কয়লা প্রজ্বালন হয়ে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।
এদিকে, এই খনির ওপর নির্ভর করে পাশেই গড়ে উঠেছে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রথম অবস্থায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি কয়লা বাইরে বিক্রি করা হলেও ২০১৯ সাল থেকে বাইরে বিক্রি বন্ধ করে উৎপাদিত কয়লা শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারি উচ্চমহল থেকে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ২নং ইউনিটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে।
এখন ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১নং ইউনিট থেকে ৬৫ মেগাওয়াট ও ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৩নং ইউনিট থেকে উৎপাদন হচ্ছে ১৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এতে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, খনি কর্তৃপক্ষ বেশি পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করায় ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মজুত হয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা।