মাতৃহারা শিশু সাজ্জাদের আঁকুতি
আমরা এখন কিভাবে বাঁচব?
কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম
‘এক মাস আগে আমাদের মা মারা গেছেন। গত দুই দিন আগে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি এখন জেলে আছেন। ঘরে অসুস্থ দাদি। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। আমরা এখন কিভাবে বাঁচব?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের শিশু সাজ্জাদ মিয়া (১৩)।
স্কুলছাত্র শিশু সাজ্জাদ চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার বড় সন্তান ও স্থানীয় এমএম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
সরেজমিন জানা গেছে, গত এক মাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, আমার ভাই বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেই। এক সময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া এমএম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়াও ১ মাস বয়সি দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। এই দুই কন্যা সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় জামালের স্ত্রী সাথী বেগম মারা যান। আমার বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা আমার ভাই জামালই করতেন। এখন জামালের চার শিশুসন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।
প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নাই। তারপরেও তাকে কেন একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হলো? জামালের অবুঝ চার শিশু সন্তানের দায়িত্ব এখন কে নেবে? জামালকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। তাই এই চার শিশুসন্তান ও অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের দিকে তাকিয়ে আমারা এলাকাবাসী জামালের মুক্তির দাবি জানাই।
জামালের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া বলেন, কয়েক দিন পরেই আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। আমার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দিবে? আমার একমাস বয়সি দুই বোনের দুধের টাকা কে দিবে? আজ তিন দিন আমাদের চুলা জ্বলে না। বাড়ির আশপাশের লোকজন আমাদের খাবার দিচ্ছেন, এভাবে কতদিন চলবে? আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।
কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিল বলে আমরা জেনেছি। তাই তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।