বাগমারায় হেলমেট বাহিনী এখনো সক্রিয়, ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
রাজশাহীর বাগমারায় দাবি করা চাঁদা না পেয়ে পুকুরসহ ১৩ একর জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জালাল বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ কাজে তাকে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জালালের হেলমেট বাহিনী দলটির স্থানীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন তারা বিএনপির হয়ে ভাড়ায় খাটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
হেলমেট বাহিনীর হামলায় গত ৪ নভেম্বর নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। এই পুকুর দখল নিয়ে দুইপক্ষই বাগমারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা জালালের হেলমেট বাহিনী এখনো এলাকায় সক্রিয়। গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে যাওয়ায় তাদের চাঁদাবাজি ও দখল আগের মতোই চলছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর এই হেলমেট বাহিনী বিভিন্ন পক্ষের হয়ে পুকুর জমি বাড়ি দখল করেছে। সম্প্রতি উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের দুলালীপাড়া আন্ধিয়ার ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পুকুরসহ জমি ইজারা নেন স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাসহ পাঁচজন। গত ৪ নভেম্বর লিজগ্রহীতারা মাছের পোনা ছাড়ার জন্য পুকুর ঘাটে গেলে তাদের ওপর হেলমেট বাহিনীর হামলা করে।
এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। তবে সংঘর্ষের পর উভয় পক্ষই বাগমারা থানায় এজাহার দেন; কিন্তু পুলিশ হামলাকারীদের এজাহারটি আগে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন।
যদিও বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, উভয়পক্ষের অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ দুপক্ষের আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। যাদের অভিযোগ আগে পাওয়া গেছে তাদের মামলা আগে হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্ধিয়ার বাগানের পুকুরসহ জমির পরিমাণ প্রায় ১৩ একর বা ৪৫ বিঘার কিছু বেশি। এর মধ্যে গোয়ালকান্দির এনায়েতুল হক বিন্দু, নিমপাড়ার নুরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, খলিলুর রহমান ও অনন্তপাড়ার শাহজামালের জমি রয়েছে ১২ একর। বাকি এক একর অন্য তিনটি পরিবারের রয়েছে পুকুরস্থলে।
এদিকে জমির মালিকদের মধ্যে খলিলুর রহমান, মাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজামাল মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তারেক রহমান প্রজন্ম দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমানেরও কিছু জমি রয়েছে সেখানে।
জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর জমির মালিকদের কাছ থেকে পুকুরসহ পুরো জমি লিজ গ্রহণ করেন উপজেলার বড়বিহানলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মিলন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কনোপাড়া গ্রামের জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ এবং ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান মিল্টন। জমির মালিকদের সঙ্গে এসব ব্যক্তির দলিলের ওপর লেখাপড়া হয়।
ইজারা চুক্তি অনুযায়ী গত ৪ নভেম্বর জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা, বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ হিটলার এবং আরেক অংশীদার দুলালিপাড়ার রায়হান আলী পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য যান ঘটনাস্থলে। তাদের সঙ্গে কয়েকজন কামলা মজুরও ছিলেন।
লিজ গ্রহীতাদের অভিযোগ, দুলালীপাড়া গ্রামের জালালের হেলমেট বাহিনীর লোকজন তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে।
অভিযোগে জানা গেছে, জালাল উদ্দিন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন সরকারের ‘হেলমেট বাহিনীর’ প্রধান হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ ভাড়ায় খাটার অভিযোগ রয়েছে। হেলমেট বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। পুলিশের খাতায় পলাতক হলেও জালাল বাহিনীর লোকেরা প্রকাশ্যে চলাফেরা করেন।
ইজারা গ্রহীতা জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘটনার দিন বিকালে আমরা পুকুরে মাছ ছাড়তে গিয়েছিলাম। এ সময় হেলমেট বাহিনীর প্রধান জালাল এসে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে পুকুরে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না বলে জানায়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার ‘হেলমেট বাহিনী’ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমিসহ কয়েকজন আহত হই। পরে স্থানীয়রা এসে আমাদের উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। আমরা চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে পরদিন থানায় যাই। সেদিন পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করেননি। গত ৬ নভেম্বর পুলিশ আমাদের থানায় ডাকেন। সারাদিন বসিয়ে রেখে রাত নয়টার দিকে এজাহার গ্রহণ করলেও সেটি সংশোধন করে মামলা করেন। ওইদিন আমরা জানতে পারি আমাদের মামলার আগেই হামলাকারীদের দেওয়া মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। আমি বাদী হয়ে যে মামলা করেছি সেটিতে জালাল প্রধান আসামি।
এদিকে চাঁদা না পেয়ে জমি দখলে ইজারাদারদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলমেট বাহিনীর প্রধান জালাল উদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ। এখন কথা বলতে পারব না। কে কী করেছে আমরা কিছু জানি না।
অন্যদিকে জালালের স্থানীয় আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত গোয়ালকান্দি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বকুল সরদার বলেন, ওই পুকুর ও জমি দখল চেষ্টার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কেউ ডাকলে সেখানে আমাকে যেতে হয়। সেই কারণে জালালের সঙ্গে একদিন থানায় গিয়েছিলাম।