ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্ঘুম শ্রমিকরা, কয়েক কিমি যানজট
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি অবরোধ করে রেখেছেন পোশাক শ্রমিকরা। পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাাহিনীর কোনো আশ্বাস ও কথাই শুনতে নারাজ তারা। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই অবস্থানের পক্ষে অনড় শ্রমিকরা। মহাসড়কে হাজার হাজার মানুষের চরম ভোগান্তির কথা জানলেও শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত সড়কেই অবস্থানের সিদ্ধান্তে অটল।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হওয়া সড়ক অবরোধের কারণে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষ ও পরিবহণ চালকরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শ্রমিকরা শনিবার দুপুর থেকে অবরোধ সরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আশ্বস্ত করলেও সারারাত তাদের অবরোধ অব্যাহত রাখেন। রাতভর শ্রমিকরা মহাসড়কেই নির্ঘুম কাটিয়েছেন।
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকরা। এতে রোববার মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দেশের ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তি আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।
শনিবার (৯ নভম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা শুরু হওয়া মহাসড়ক অবরোধ রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর আগে ওই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপরেই শ্রমিকরা মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের তৈরি হয়। অনেক যানবাহন ১৫-২০ ঘণ্টা ধরে রাস্তায় যানজটে আটকা পড়ে আছে।
রাজশাহী থেকে ট্রাকযোগে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক চালক ইকবাল হোসেন বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে আসি। এর পর রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত মাত্র আধা কিলোমিটারের মতো পথ আসতে পেরেছি। রাস্তা সরু হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে বিকল্প পথে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
প্রাইভেটকার চালক সাফায়েত হোসেন বলেন, জরুরি কাজে অফিসের স্যারকে নিয়ে শনিবার দুপুর থেকে বাসন সড়ক এলাকায় আটকা পড়েছে। বিকল্প যানে বস চলে গেলেও আমি রাস্তায় পড়ে আছি। খাবার, গোসল সবকিছু বন্ধ। গাড়ি রাস্তায় রেখে কোথাও যেতেও পারছি না। সারারাত গাড়ির মধ্যে আতঙ্কে নির্ঘুম কাটিয়েছি।
উত্তরবঙ্গ নওগাঁ থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আসা যাত্রী শরিফ আহমেদ বলেন, সকালে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে বাস থেকে নেমে ঢাকায় যাওয়ার কোনো যানবাহন না পেয়ে দুই সন্তান স্ত্রী ও দুটি ব্যাগ নিয়ে অনেক কষ্ট করে এক কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে এসেছি। এখন আর পারছি না। জানতে পারলাম আরো এক কিলোমিটার পথ হেঁটে পার হলে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।
নির্ঘুম রাত কাটানো শ্রমিক রেহেনা আক্তার বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। পুলিশ ও প্রশাসন বারবার আমাদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে আমাদের দাবি মেটানো হয়নি। বাসা ভাড়া, দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছি না। ঘরে খাবার নেই, সন্তানকে বাবার কাছে রেখে আমি বেতনের দাবিতে সারারাত রাস্তায় কাটিয়েছি।
অপর শ্রমিক সালমা আক্তার বলেন, আমরা মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের কষ্টের কথাও সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা শখ করে রাস্তায় রাত জেগে বসে থাকিনি। আমরা আমাদের বকেয়া বেতন পেলেই অবরোধ তুলে নেব।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে টঙ্গীর কাছাকাছি যানজট গিয়ে পৌঁছায়। আমরা অনেক গাড়িতে বিকল্প পথে চলাচল করছে। এছাড়াও মহাসড়কে অনেক গুলো ড্রাইভারসন আছে সেগুলো দিয়ে চালক ও যাত্রীরা চলাচল করছে। আমরা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ, উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার শ্রমিকদের সাথে আমরা দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিল দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেবে। পরে বলেছিল বিকেল পাঁচটায় অবরোধ তুলে নেবে, কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেয়নি। এখন তারা বলছে রাত দশটায় অবরোধ তুলে নেবে। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোন আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।