পবার কাটাখালী ডিগ্রি কলেজ
অধ্যক্ষের চেয়ার দখল বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম
এক শিক্ষক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে রাজশাহীর পবার কাটাখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার দখলের অভিযোগ উঠেছে। সিরাজুল হক নামের ওই সহকারী অধ্যাপক রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গত এপ্রিলে দলীয় সদ্ধিান্ত উপেক্ষা করে সিরাজুল কাটাখালী পৌরসভার উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া কলেজের এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিল। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৯ আগস্ট তিনি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনকে তার কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলাও চালিয়েছেন অধ্যক্ষের বাড়িতে। তাই ভয়ে কলেজে যেতে পারেননি অধ্যক্ষ। এ দুই অভিযোগে অধ্যক্ষ থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এ অবস্থায় ২৩ অক্টোবর কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন কলেজের শিক্ষক বদরুল আমিন সরকারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কিন্তু পরদিনই অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন সিরাজুল। এখন কলেজটিতে অধ্যক্ষের পদ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ২৮ অক্টোবর ইউএনও দিকনির্দেশনা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এর আগে অধ্যক্ষ জয়নালকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়া ও তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় ২০ অক্টোবর তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে, এখনো কলেজে যেতে পারেননি জয়নাল আবেদীন। দায়িত্ব নিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বদরুল আমিন সরকারও। অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে আছেন ভূগোল শিক্ষক সিরাজুল হক।
এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিরাাজুল হক বলেন, এলাকার লোকজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে। তাদের অনুমতি নিয়েই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। অধ্যক্ষ পালিয়ে থাকলে তো কলেজ চলে না। তাই স্বেচ্ছায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি।' সিরাজুল দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। তিনি রাজনৈতিক ষড়যনে্ত্রর শিকার।
সিরাজুলের বিরুদ্ধে কলেজের এক ছাত্রীর মা ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। সিরাজুলের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ জন ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।
কলেজের সার্বিক বিষয় নিয়ে সভাপতি ও পবার ইউএনও বলেন, ‘অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকায় আমরা একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দিতে চাই। তখন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে চাইলে তারা অপরাগতা প্রকাশ করেন। আর সিরাজুল হক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হলেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। তাই আমরা তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করে অন্যজনকে করি। কিন্তু পরদিনই সিরাজুল হক নিজেই অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে যান। এ পরিস্থিতিতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন করণীয় কী তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকেই সদ্ধিান্ত আসবে বলে আশা করছি।'