রাজবাড়ীর হাসপাতালগুলোতে নেই জলাতঙ্কের টিকা, রোগীদের ভোগান্তি
হেলাল মাহমুদ, রাজবাড়ী
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পিএম
প্রায় একমাস যাবত রাজবাড়ী আধুনিক সদর হাসপাতালসহ, উপজেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ, কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে র্যাভিস ভ্যাকসিন (জলাতঙ্কের টিকা) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত রোগীদের হাসপাতালে গিয়ে টিকা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে উচ্চমূল্যে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই নয় জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও শিয়াল, কুকুর ও বিড়ালে কামড়ানো রোগীদের।
জেলা শহরসহ উপজেলা শহরগুলো হাসপাতালে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সি মানুষ শিয়াল, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত এসব রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিড় করলেও প্রায় এক মাস যাবত (র্যাভিস) ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। এতে করে আক্রান্ত রোগীদের বাইরের ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। যা অনেক রোগীদের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগীরা জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বাইরের ফার্মেসি থেকে টিকা কিনে নিয়ে এসে হাসপাতালের নার্সদের দিয়ে পুশ করে নিচ্ছেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়ার কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই কক্ষের দরজার বেশ কয়েকটি স্থানে লেখা রয়েছে গত ১৩ অক্টোবর থেকে বিড়াল, কুকুড়ের ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই।
হাসপাতালে টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নার্স রওশন আরা বলেন, প্রায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগী জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে হাসপাতালে আসেন। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮৮জন রোগীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় সবাই বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আমাদের এখানে ভ্যাকসিন নিতে আসেন। এরপর আমরা রোগীদের ভ্যাকসিন তাদের শরীরে পুশ করি। বাইরের এই ভ্যাকসিন ফার্মেসিতে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করে রোগীরা কিনে আনলে একটা ভ্যাকসিন গ্রুপ করে ৪ জনকে পুশ করে দেই।
সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, গত পরশু দিন আমাকে বিড়ালে কামড় দিয়েছে। আমি সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসককে দেখালে তিনি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নম্বর কক্ষে ভ্যাকসিন নিতে গেলে তারা বলেন ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে ৪ জন গ্রুপ করে বাইরের ফার্মেসি থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন ও ৪০ টাকা দিয়ে ৪ টা সিরিঞ্জ কিনে আনলে নার্সরা আমাদের ভ্যাকসিন দেন।
সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মৌসুমি খাতুন বলেন, কুকুরে কামড় দেওয়ার পর ভ্যাকসিন নিতে সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ভ্যাকসিন সাপ্লাই নেই। পরবর্তীতে ৪জনকে গ্রুপ করে বাইরে থেকে কিনে রোগীদের দেন। টাকা না থাকায় পরে আমি হাসপাতাল থেকে ফিরে চলে আসি।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শেখ আব্দুল হান্নান যুগান্তরকে বলেন, শুক্র ও শনিবার নাগাদ আমরা জলাতঙ্কের টিকা পেয়ে যাব,তারপর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নিয়মিত সেবা পাবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে গোয়ালন্দের পৌরসভার মাষ্টার পাড়ার ৫ জন, নগররায়ের পাড়ার ৪ জন ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ জনসহ মোট ৯ জনকে শিয়ালে কামড় দেয়।
তখন শিয়ালে কামড়ানো রোগীরা গোয়ালন্দ হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিতে গেলে সেখানে না পেয়ে তারা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চলে যান, সেখানে গিয়েও তারা টিকা না পেয়ে সেখানকার ফার্মেসি থেকে চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনে নার্স দিয়ে পুশ করে নেন।