Logo
Logo
×

সারাদেশ

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

৫ কোটি টাকার কাজ পেলেন না বিএনপি নেতার লোক, তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পিএম

৫ কোটি টাকার কাজ পেলেন না বিএনপি নেতার লোক, তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) টেন্ডারের সব কাজ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু। তার নেতৃত্বে নিজ কক্ষে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছিতের সিসিটিভি ফুটেজও ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযুক্ত একে শরফুদ্দৌলা ছোটলু ‘এ কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য।

এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, ছোটলু সাহেব সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক। সম্প্রতি একটি কাজের টেন্ডার হয়েছে। তিনি সেই টেন্ডারের কয়েকটি গ্রুপে দরপত্র জমা দেন। সব কাজ না পাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হন। পরবর্তীতে তার উপস্থিতিতে তার লোকজন আমার চেয়ার থেকে নামিয়ে দিতে আসে। তখন আমিও আমার সম্মান রক্ষার্থে সেই ছেলেটিকে আটকাতে চেষ্টা করি। এ ঘটনা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি পরবর্তীতে যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেবেন সেটাই গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা একে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে; তবে হাসপাতালে কোনো টেন্ডার জমা দেইনি। তার কাছে আমার একটি কাজ ছিল তাই গিয়েছিলাম। হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। তাই তাদের দুজনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি বিষয়টি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।

জানা যায়, গত অক্টোবর মাসে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) জন্য ৬টি গ্রুপে প্রায় ৫ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করা হয়। এই টেন্ডারে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এতে জেলা বিএনপির সদস্য একে শরফুদ্দৌলা ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়। ছোটলুর পছন্দের প্রতিষ্ঠান কয়েকটি গ্রুপের কাজ পেলেও সব পায়নি।

বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একদল যুবককে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের তিনি তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিতের নির্দেশ দেন।

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা ছোটলু হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে তার কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপি কর্মী হাবিবুল্লাহ। তিনি প্রবেশ করেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন। এর মধ্যেই ছোটলুর নেতৃত্বে আরও ৭-৮ জন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে ছোটলু ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে হাবিবুল্লাহকে তত্ত্বাবধায়কের চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন ছোটলু। নির্দেশমতো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে গেলে তত্ত্বাবধায়কও হাবিবুল্লার জামার কলার ধরে আত্মরক্ষা করেন। এ সময় দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের অন্য স্টাফরা এগিয়ে গেলে ছোটলু তার লোকজন নিয়ে চলে যান।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বজলুর রশিদ জানান, ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে তিনি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যান। এ সময় বিএনপি নেতা ছোটলু সাহেবের নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে তারা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম